বেসিক সূরা তথ্য
সূরা নম্বর – 74
আয়াত সংখ্যা – 56
প্রকাশিত শহর – মক্কা
জুজ বিবরণ – জুজ 29 আয়াত 1-56
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 575 তম পৃষ্ঠা
সূরা আল-মুদ্দাসসিরের সারাংশ
সূরা আল-মুদ্দাসসির, কুরআনের 74তম সূরা, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে সম্বোধন করে এবং ইসলামের বার্তা প্রদানের গুরুত্ব তুলে ধরে, এটিকে প্রত্যাখ্যান করার পরিণতির বিরুদ্ধে সতর্ক করে। সূরায় “আল-মুদ্দাসসির” (মোড়ানো এক) উল্লেখ থেকে এর নাম এসেছে। এটি 56টি শ্লোক নিয়ে গঠিত৷
সূরাটি শুরু হয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে সম্বোধন করে যিনি তাঁর চাদরে মোড়ানো এবং তাঁকে জেগে ওঠার জন্য এবং বিচার দিবস এবং তাদের অবিশ্বাসের পরিণতি সম্পর্কে লোকদের সতর্ক করার নির্দেশ দেন। এটি তার মিশনের জরুরীতা এবং গুরুত্বকে তুলে ধরে।
সূরা আল-মুদ্দাসসির শুদ্ধকরণের গুরুত্ব এবং অপবিত্র অভ্যাস প্রত্যাখ্যানের উপর জোর দিয়েছে। এটি মূর্তি পূজা এবং জাগতিক সম্পদের প্রতি আসক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক করে, আধ্যাত্মিক শুদ্ধিকরণ এবং বস্তুগত বিভ্রান্তি থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
সূরাটি নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বিরোধীদের কাছ থেকে যে প্রতিরোধ ও উপহাসের মুখোমুখি হয়েছিল তা চিত্রিত করে যারা তাঁর বার্তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। এটি তার বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস করার এবং অন্যদের তাকে অনুসরণ করতে নিরুৎসাহিত করার তাদের প্রচেষ্টার বর্ণনা করে।
সূরা আল-মুদ্দাসসির কাফেরদের কেয়ামতের দিন এবং তাদের কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে বলে সতর্ক করে। এটি সেই শাস্তি এবং যন্ত্রণার বর্ণনা করে যা তাদের জন্য অপেক্ষা করে যারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে।
সূরাটি আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে তুলে ধরে, যিনি সৃষ্টির সমস্ত দিক নিয়ন্ত্রণ করেন এবং শাস্তি ও পুরস্কার উভয়ই আনার ক্ষমতা রাখেন। এটি অবিশ্বাসীদের তাদের দুর্বলতা এবং সত্যের বিরুদ্ধে তাদের প্রচেষ্টার চূড়ান্ত অসারতার কথা মনে করিয়ে দেয়।
সূরা আল-মুদ্দাসসির স্মরণ এবং কুরআন তেলাওয়াতের তাৎপর্যের উপর জোর দিয়ে শেষ হয়েছে। এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে তার মিশনে অবিচল থাকতে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করে৷
সংক্ষেপে, সূরা আল-মুদ্দাসসির নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে সম্বোধন করে এবং ইসলামের বার্তা প্রদানের গুরুত্বের উপর জোর দেয় এবং এটি প্রত্যাখ্যান করার পরিণতির বিরুদ্ধে সতর্ক করে। এটি অপবিত্র অভ্যাস, মূর্তি পূজা এবং পার্থিব সম্পদের প্রতি আসক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক করে। সূরাটি নবীর মুখোমুখি হওয়া প্রতিরোধ এবং বিচার দিবসে কাফেরদের জবাবদিহিতার কথা তুলে ধরে। এটি স্মরণের শক্তির উপর জোর দিয়ে এবং আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার মাধ্যমে শেষ হয়৷
বাংলায় সূরা আল-মুদ্দাসসির এর অনুবাদ পড়ুন
1. হে চাদরাবৃত!
2. উঠুন, সতর্ক করুন,
3. আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষনা করুন,
4. আপন পোশাক পবিত্র করুন
5. এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন।
6. অধিক প্রতিদানের আশায় অন্যকে কিছু দিবেন না।
7. এবং আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে সবর করুন।
8. যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে;
9. সেদিন হবে কঠিন দিন,
10. কাফেরদের জন্যে এটা সহজ নয়।
11. যাকে আমি অনন্য করে সৃষ্টি করেছি, তাকে আমার হাতে ছেড়ে দিন।
12. আমি তাকে বিপুল ধন-সম্পদ দিয়েছি।
13. এবং সদা সংগী পুত্রবর্গ দিয়েছি,
14. এবং তাকে খুব সচ্ছলতা দিয়েছি।
15. এরপরও সে আশা করে যে, আমি তাকে আরও বেশী দেই।
16. কখনই নয়! সে আমার নিদর্শনসমূহের বিরুদ্ধাচরণকারী।
17. আমি সত্ত্বরই তাকে শাস্তির পাহাড়ে আরোহণ করাব।
18. সে চিন্তা করেছে এবং মনঃস্থির করেছে,
19. ধ্বংস হোক সে, কিরূপে সে মনঃস্থির করেছে!
20. আবার ধ্বংস হোক সে, কিরূপে সে মনঃস্থির করেছে!
21. সে আবার দৃষ্টিপাত করেছে,
22. অতঃপর সে ভ্রূকুঞ্চিত করেছে ও মুখ বিকৃত করেছে,
23. অতঃপর পৃষ্ঠপ্রদশন করেছে ও অহংকার করেছে।
24. এরপর বলেছেঃ এতো লোক পরস্পরায় প্রাপ্ত জাদু বৈ নয়,
25. এতো মানুষের উক্তি বৈ নয়।
26. আমি তাকে দাখিল করব অগ্নিতে।
27. আপনি কি বুঝলেন অগ্নি কি?
28. এটা অক্ষত রাখবে না এবং ছাড়বেও না।
29. মানুষকে দগ্ধ করবে।
30. এর উপর নিয়োজিত আছে উনিশ (ফেরেশতা)।
31. আমি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতাই রেখেছি। আমি কাফেরদেরকে পরীক্ষা করার জন্যেই তার এই সংখ্যা করেছি-যাতে কিতাবীরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা ও মুমিনগণ সন্দেহ পোষণ না করে এবং যাতে যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা এবং কাফেররা বলে যে, আল্লাহ এর দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছেন। এমনিভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে চালান। আপনার পালনকর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন এটা তো মানুষের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।
32. কখনই নয়। চন্দ্রের শপথ,
33. শপথ রাত্রির যখন তার অবসান হয়,
34. শপথ প্রভাতকালের যখন তা আলোকোদ্ভাসিত হয়,
35. নিশ্চয় জাহান্নাম গুরুতর বিপদসমূহের অন্যতম,
36. মানুষের জন্যে সতর্ককারী।
37. তোমাদের মধ্যে যে সামনে অগ্রসর হয় অথবা পশ্চাতে থাকে।
38. প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী;
39. কিন্তু ডানদিকস্থরা,
40. তারা থাকবে জান্নাতে এবং পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
41. অপরাধীদের সম্পর্কে
42. বলবেঃ তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে?
43. তারা বলবেঃ আমরা নামায পড়তাম না,
44. অভাবগ্রস্তকে আহার্য্য দিতাম না,
45. আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম।
46. এবং আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম।
47. আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত।
48. অতএব, সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোন উপকারে আসবে না।
49. তাদের কি হল যে, তারা উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়?
50. যেন তারা ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত গর্দভ।
51. হট্টগোলের কারণে পলায়নপর।
52. বরং তাদের প্রত্যেকেই চায় তাদের প্রত্যেককে একটি উম্মুক্ত গ্রন্থ দেয়া হোক।
53. কখনও না, বরং তারা পরকালকে ভয় করে না।
54. কখনও না, এটা তো উপদেশ মাত্র।
55. অতএব, যার ইচ্ছা, সে একে স্মরণ করুক।
56. তারা স্মরণ করবে না, কিন্তু যদি আল্লাহ চান। তিনিই ভয়ের যোগ্য এবং ক্ষমার অধিকারী।