বেসিক সূরা তথ্য
সূরা নম্বর – 52
আয়াত সংখ্যা – 49
প্রকাশিত শহর – মক্কা
জুজ বিবরণ – জুজ 27 আয়াত 1-49
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 523 তম পৃষ্ঠা
সূরা আত-তুর এর সারাংশ
সূরা আত-তুর, কুরআনের 52 তম সূরা, আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব, কুফরী ও রসূলদের প্রত্যাখ্যানের পরিণতি এবং বিচার দিবসকে তুলে ধরে। এটি 49টি শ্লোক নিয়ে গঠিত৷
সূরাটি শুরু হয়েছে সিনাই পর্বতকে (আত-তুর) সত্যের সাক্ষী এবং আল্লাহর শক্তির প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করে। এটি জোর দেয় যে কাফেরদের শাস্তির বিষয়ে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং তারা এর পরিণতি ভোগ করবে৷
সূরা আত-তুর অতীতের জাতির কাহিনী বর্ণনা করে যারা তাদের রসূলদের প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং পরবর্তীকালে আল্লাহ কর্তৃক শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল। এটি অবিশ্বাসীদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তিনি যে বার্তা নিয়ে এসেছিলেন তা প্রত্যাখ্যান করার পরিণতি সম্পর্কে একটি অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে৷
সূরাটি বিচার দিবস এবং পুনরুত্থানের বাস্তবতা তুলে ধরে। এটি সেই দিনের দৃশ্য বর্ণনা করে, লোকেরা দুটি দলে বিভক্ত ছিল: ধার্মিক যারা জান্নাতে পুরস্কৃত হবে এবং কাফেররা যারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
সূরা আত-তুর আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতিফলনের গুরুত্বের উপর জোর দেয়। এটি অবিশ্বাসীদেরকে বার্তাটির সত্যতা বিবেচনা করতে এবং দেরী হওয়ার আগে আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে উত্সাহিত করে৷
সূরাটি অবিশ্বাসীদের আসন্ন শাস্তি ও ধ্বংসের বিষয়ে সতর্ক করে যা তাদের উপর ঘটবে। এটি তাদের মনে করিয়ে দেয় যে বার্তাবাহকরা বানোয়াট নয় বরং সত্যের বাহক, এবং তাদের বার্তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদের জবাবদিহি করা হবে।
সূরা আত-তুর ধার্মিকদের জন্য জান্নাতের পুরষ্কার এবং আনন্দ বর্ণনা করে। এটি সেই আশীর্বাদের একটি প্রাণবন্ত চিত্র চিত্রিত করে যা তাদের জন্য অপেক্ষা করে যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, ভালো কাজ করে এবং তাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে।
আল্লাহর কর্তৃত্ব এবং তাঁর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ক্ষমতার উপর জোর দিয়ে সূরাটি শেষ হয়েছে। এটি কাফেরদের মনে করিয়ে দেয় যে কুরআন বানোয়াট নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট প্রত্যাদেশ এবং তাদের উচিত এর বার্তা মেনে চলা।
সংক্ষেপে, সূরা আত-তুর আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে তুলে ধরে, সত্যকে প্রত্যাখ্যান করার পরিণতি সম্পর্কে অবিশ্বাসীদের সতর্ক করে, বিচার দিবসের বাস্তবতার ওপর জোর দেয় এবং ধার্মিকদের জন্য জান্নাতের পুরস্কার বর্ণনা করে। সূরাটি আল্লাহর নিদর্শন, তাঁর সৃষ্টির প্রতি প্রতিফলন করার গুরুত্ব এবং খুব দেরী হওয়ার আগে তাঁর দিকে ফিরে যাওয়ার প্রয়োজনের অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে।
বাংলায় সূরা আত-তুর এর অনুবাদ পড়ুন
1. কসম তূরপর্বতের,
2. এবং লিখিত কিতাবের,
3. প্রশস্ত পত্রে,
4. কসম বায়তুল-মামুর তথা আবাদ গৃহের,
5. এবং সমুন্নত ছাদের,
6. এবং উত্তাল সমুদ্রের,
7. আপনার পালনকর্তার শাস্তি অবশ্যম্ভাবী,
8. তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না।
9. সেদিন আকাশ প্রকম্পিত হবে প্রবলভাবে।
10. এবং পর্বতমালা হবে চলমান,
11. সেদিন মিথ্যারোপকারীদের দুর্ভোগ হবে,
12. যারা ক্রীড়াচ্ছলে মিছেমিছি কথা বানায়।
13. সেদিন তোমাদেরকে জাহান্নামের অগ্নির দিকে ধাক্কা মেরে মেরে নিয়ে যাওয়া হবে।
14. এবং বলা হবেঃ এই সেই অগ্নি, যাকে তোমরা মিথ্যা বলতে,
15. এটা কি জাদু, না তোমরা চোখে দেখছ না?
16. এতে প্রবেশ কর অতঃপর তোমরা সবর কর অথবা না কর, উভয়ই তোমাদের জন্য সমান। তোমরা যা করতে তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল দেয়া হবে।
17. নিশ্চয় খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নেয়ামতে।
18. তারা উপভোগ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদের দেবেন এবং তিনি জাহান্নামের আযাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন।
19. তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা যা করতে তার প্রতিফলস্বরূপ তোমরা তৃপ্ত হয়ে পানাহার কর।
20. তারা শ্রেণীবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। আমি তাদেরকে আয়তলোচনা হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব।
21. যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী, আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল বিন্দুমাত্রও হ্রাস করব না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃত কর্মের জন্য দায়ী।
22. আমি তাদেরকে দেব ফল-মূল এবং মাংস যা তারা চাইবে।
23. সেখানে তারা একে অপরকে পানপাত্র দেবে; যাতে অসার বকাবকি নেই এবং পাপকর্মও নেই।
24. সুরক্ষিত মোতিসদৃশ কিশোররা তাদের সেবায় ঘুরাফেরা করবে।
25. তারা একে অপরের দিকে মুখ করে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
26. তারা বলবেঃ আমরা ইতিপূর্বে নিজেদের বাসগৃহে ভীত-কম্পিত ছিলাম।
27. অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন।
28. আমরা পূর্বেও আল্লাহকে ডাকতাম। তিনি সৌজন্যশীল, পরম দয়ালু।
29. অতএব, আপনি উপদেশ দান করুন। আপনার পালনকর্তার কৃপায় আপনি অতীন্দ্রিয়বাদী নন এবং উম্মাদও নন।
30. তারা কি বলতে চায়ঃ সে একজন কবি আমরা তার মৃত্যু-দুর্ঘটনার প্রতীক্ষা করছি।
31. বলুনঃ তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষারত আছি।
32. তাদের বুদ্ধি কি এ বিষয়ে তাদেরকে আদেশ করে, না তারা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়?
33. না তারা বলেঃ এই কোরআন সে নিজে রচনা করেছে? বরং তারা অবিশ্বাসী।
34. যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে, তবেএর অনুরূপ কোন রচনা উপস্থিত করুক।
35. তারা কি আপনা-আপনিই সৃজিত হয়ে গেছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা?
36. না তারা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করে না।
37. তাদের কাছে কি আপনার পালনকর্তার ভান্ডার রয়েছে, না তারাই সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক?
38. না তাদের কোন সিঁড়ি আছে, যাতে আরোহণ করে তারা শ্রবণ করে? থাকলে তাদের শ্রোতা সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করুক।
39. না তার কন্যা-সন্তান আছে আর তোমাদের আছে পুত্রসন্তান?
40. না আপনি তাদের কাছে পারিশ্রমিক চান যে, তাদের উপর জরিমানার বোঝা চেপে বসে?
41. না তাদের কাছে অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আছে যে, তারাই তা লিপিবদ্ধ করে?
42. না তারা চক্রান্ত করতে চায়? অতএব যারা কাফের, তারই চক্রান্তের শিকার হবে।
43. না তাদের আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত কোন উপাস্য আছে? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ তা’আলা তা থেকে পবিত্র।
44. তারা যদি আকাশের কোন খন্ডকে পতিত হতে দেখে, তবে বলে এটা তো পুঞ্জীভুত মেঘ।
45. তাদেরকে ছেড়ে দিন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তাদের উপর বজ্রাঘাত পতিত হবে।
46. সেদিন তাদের চক্রান্ত তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।
47. গোনাহগারদের জন্যে এছাড়া আরও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।
48. আপনি আপনার পালনকর্তার নির্দেশের অপেক্ষায় সবর করুন। আপনি আমার দৃষ্টির সামনে আছেন এবং আপনি আপনার পালনকর্তêার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন যখন আপনি গাত্রোত্থান করেন।
49. এবং রাত্রির কিছু অংশে এবং তারকা অস্তমিত হওয়ার সময় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন।