বেসিক সূরা তথ্য
সূরা নম্বর – 49
আয়াত সংখ্যা – 18
প্রকাশিত শহর – মদিনা
জুজ বিবরণ – জুজ 26 আয়াত 1-18
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 515 তম পৃষ্ঠা
সূরা আল-হুজুরাতের সারাংশ
সূরা আল-হুজুরাত, কুরআনের 49 তম সূরা, শিষ্টাচার, সামাজিক আচরণ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যের গুরুত্ব সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়বস্তু সম্বোধন করে। এটি 18টি শ্লোক নিয়ে গঠিত৷
বিশ্বাস এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সামনে তাড়াহুড়ো না করার গুরুত্ব তুলে ধরে সূরাটি শুরু হয়েছে। এটি তথ্য যাচাই করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয় এবং গুজব না ছড়ায় বা গীবত, গসিপ বা অপবাদে লিপ্ত না হয়।
সূরা আল-হুজুরাত আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তম আচরণ এবং সম্মানের তাৎপর্যের উপর জোর দেয়। এটি বিশ্বাসীদের একে অপরের সাথে সদয় আচরণ করতে, সন্দেহ এড়াতে এবং শান্তিপূর্ণ এবং ন্যায়সঙ্গত উপায়ে বিরোধগুলি সমাধান করতে উত্সাহিত করে৷
সূরাটি শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টিকে সম্বোধন করে এবং বিশ্বাসীদের মনে করিয়ে দেয় যে সম্মানের প্রকৃত পরিমাপ জাগতিক মর্যাদা বা বংশের পরিবর্তে ধার্মিকতা এবং ঈশ্বর-চেতনার মধ্যে নিহিত। এটি জোর দেয় যে সমস্ত বিশ্বাসী আল্লাহর কাছে সমান, তাদের জাতি, গোত্র বা জাতীয়তা নির্বিশেষে।
সুরা আল-হুজুরাত অন্যদের উপহাস, উপহাস এবং অবজ্ঞা করা এড়িয়ে চলার গুরুত্ব তুলে ধরে। এটি বিশ্বাসীদেরকে তাদের কথার প্রতি মনোযোগী হতে এবং সম্মানজনক এবং বিবেচ্যভাবে কথা বলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
সূরাটি মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের গুরুত্বের উপর জোর দেয়। এটি বিশ্বাসীদের তাদের মতভেদ মিটমাট করতে এবং বিভেদমূলক আচরণে লিপ্ত না হওয়ার জন্য উত্সাহিত করে। এটা তাদের মনে করিয়ে দেয় যে সত্যিকারের সফলতা তাদের ইসলামের শিক্ষার প্রতি আনুগত্য এবং একটি সম্প্রদায় হিসেবে তাদের ঐক্যের মধ্যে নিহিত রয়েছে।
সূরা আল-হুজুরাত মুনাফিকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার বিরুদ্ধে এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ ছড়ানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করে। এটি বিশ্বস্ততা বজায় রাখার, প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং একে অপরের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্যের গুরুত্ব তুলে ধরে এবং বিশ্বাসীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে যে সূরাটি শেষ হয়েছে যে তাদের চূড়ান্ত জবাবদিহিতা আল্লাহর কাছে। এটি তাদের ক্ষমা চাইতে, জ্ঞান বাড়াতে এবং তাদের বিশ্বাসে অবিচল থাকতে উৎসাহিত করে।
সংক্ষেপে, সূরা আল-হুজুরাত মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাল আচরণ, সামাজিক আচরণ এবং ঐক্যের গুরুত্বকে সম্বোধন করে। এটি সম্মানজনক যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়, গসিপ এবং অপবাদ এড়ানো এবং মতভেদ মিটমাট করার গুরুত্বের উপর জোর দেয়। সূরাটি একতা, বিশ্বস্ততা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের তাৎপর্য তুলে ধরে। এটি সেই মূল্যবোধ এবং নীতিগুলির একটি অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে যা বিশ্বাসীদের মিথস্ক্রিয়া এবং সম্পর্কগুলিকে পরিচালনা করা উচিত৷
বাংলায় সূরা আল-হুজুরাতের অনুবাদিত সংস্করণ পড়ুন
1. মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন।
2. মুমিনগণ! তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর তোমাদের কন্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না।
3. যারা আল্লাহর রসূলের সামনে নিজেদের কন্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে শিষ্টাচারের জন্যে শোধিত করেছেন। তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।
4. যারা প্রাচীরের আড়াল থেকে আপনাকে উচুস্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশই অবুঝ।
5. যদি তারা আপনার বের হয়ে তাদের কাছে আসা পর্যন্ত সবর করত, তবে তা-ই তাদের জন্যে মঙ্গলজনক হত। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
6. মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।
7. তোমরা জেনে রাখ তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রসূল রয়েছেন। তিনি যদি অনেক বিষয়ে তোমাদের আবদার মেনে নেন, তবে তোমরাই কষ্ট পাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী।
8. এটা আল্লাহর কৃপা ও নিয়ামতঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।
9. যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ইনছাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনছাফকারীদেরকে পছন্দ করেন।
10. মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।
11. মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।
12. মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।
13. হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।
14. মরুবাসীরা বলেঃ আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। বলুনঃ তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করনি; বরং বল, আমরা বশ্যতা স্বীকার করেছি। এখনও তোমাদের অন্তরে বিশ্বাস জন্মেনি। যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর, তবে তোমাদের কর্ম বিন্দুমাত্রও নিস্ফল করা হবে না। নিশ্চয়, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান।
15. তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা জেহাদ করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।
16. বলুনঃ তোমরা কি তোমাদের ধর্ম পরায়ণতা সম্পর্কে আল্লাহকে অবহিত করছ? অথচ আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে ভূমন্ডলে এবং যা কিছু আছে নভোমন্ডলে। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।
17. তারা মুসলমান হয়ে আপনাকে ধন্য করেছে মনে করে। বলুন, তোমরা মুসলমান হয়ে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না। বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন, যদি তোমরা সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাক।
18. আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অদৃশ্য বিষয় জানেন, তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখেন।