বেসিক সূরা তথ্য
সূরা নম্বর – 47
আয়াত সংখ্যা – 38
প্রকাশিত শহর – মদিনা
জুজ বিবরণ – জুজ 26 আয়াত 1-38
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 507 তম পৃষ্ঠা
সূরা মুহাম্মদের সারাংশ
কোরানের 47 তম সূরা, সূরা মুহাম্মাদ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করার আহ্বান, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সংগ্রাম, অবিশ্বাসের পরিণতি এবং বিশ্বাসীদের জন্য পুরস্কার সহ বিভিন্ন থিম সম্বোধন করে। এটি 38টি শ্লোক নিয়ে গঠিত৷
সূরাটি শুরু হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আনুগত্য করার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে। এটি হাইলাইট করে যে যারা বিশ্বাস করে এবং সৎ কাজ করে তাদের ক্ষমা এবং একটি মহান পুরস্কার দেওয়া হবে, যখন সত্যকে প্রত্যাখ্যান করবে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে।
সূরা মুহাম্মদ সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সংগ্রামকে সম্বোধন করে এবং এটি বিশ্বাসীদেরকে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করতে উৎসাহিত করে। এটা তাদেরকে আল্লাহর সমর্থন ও বিজয়ের আশ্বাস দেয়, এমনকি প্রতিকূলতার মধ্যেও।
সূরাটি অবিশ্বাসের পরিণাম তুলে ধরে এবং অবিশ্বাসীদের অহংকার ও দৃঢ়তার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। এটি বিচারের দিনে তাদের ভাগ্য এবং তাদের জন্য অপেক্ষা করা শাস্তি বর্ণনা করে৷
সূরা মুহাম্মাদ বিশ্বাস এবং সৎ কাজের গুরুত্বের উপর জোর দেয়। এটা বিশ্বাসীদেরকে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করতে, বিরোধিতার মুখে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে এবং নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে উৎসাহিত করে।
সূরাটি কুরআন নাযিলের প্রতি অবিশ্বাসীদের মনোভাব নিয়ে আলোচনা করে। এটি তাদের প্রত্যাখ্যান, উপহাস এবং সত্যকে বিকৃত করার প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে। এটা বিশ্বাসীদের আশ্বস্ত করে যে আল্লাহ অবিশ্বাসীদের কাজ এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত এবং তাদের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত বৃথা যাবে।
সূরা মুহাম্মাদ বিশ্বাসীদেরকে তাদের জন্য অপেক্ষা করা পুরস্কার ও আশীর্বাদের কথা মনে করিয়ে দেয়। এটি জান্নাতের বর্ণনা করে, যেখানে তারা তাদের বিশ্বাস এবং সৎ কাজের জন্য পুরষ্কার হিসাবে চিরন্তন সুখ এবং উপভোগ করা হবে।
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে, অনুতাপে তাঁর দিকে ফিরে যাওয়া এবং প্রার্থনা প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সূরাটি শেষ হয়েছে। এটি বিশ্বাসীদেরকে আল্লাহর সামনে চূড়ান্ত জবাবদিহিতা এবং তাঁর সন্তুষ্টির জন্য চেষ্টা করার প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
সংক্ষেপে, সূরা মুহাম্মদ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করার আহ্বান, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে লড়াই, কুফরের পরিণতি এবং বিশ্বাসীদের জন্য পুরষ্কারকে সম্বোধন করে। এটি বিশ্বাস, সৎ কাজ এবং বিশ্বাসীদের মধ্যে ঐক্যের গুরুত্বের উপর জোর দেয়। সূরাটি অবিশ্বাস, অহংকার এবং সত্যের বিরোধিতার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। এটি বিশ্বাসীদেরকে আল্লাহর সমর্থন ও বিজয়ের ব্যাপারে আশ্বস্ত করে এবং তাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে এবং আল্লাহর পথে সংগ্রাম করতে উৎসাহিত করে।
বাংলায় সূরা মুহাম্মদের অনুবাদিত সংস্করণ পড়ুন
1. যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে, আল্লাহ তাদের সকল কর্ম ব্যর্থ করে দেন।
2. আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদের প্রতি অবতীর্ণ সত্যে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন।
3. এটা এ কারণে যে, যারা কাফের, তারা বাতিলের অনুসরণ করে এবং যারা বিশ্বাসী, তারা তাদের পালনকর্তার নিকট থেকে আগত সত্যের অনুসরণ করে। এমনিভাবে আল্লাহ মানুষের জন্যে তাদের দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।
4. অতঃপর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গর্দার মার, অবশেষে যখন তাËেদরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও। তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে যে পর্যন্ত না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করবে! একথা শুনলে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান। যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়, আল্লাহ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না।
5. তিনি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করবেন।
6. অতঃপর তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যা তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।
7. হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।
8. আর যারা কাফের, তাদের জন্যে আছে দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দিবেন।
9. এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা পছন্দ করে না। অতএব, আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন।
10. তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি অতঃপর দেখেনি যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে? আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং কাফেরদের অবস্থা এরূপই হবে।
11. এটা এজন্যে যে, আল্লাহ মুমিনদের হিতৈষী বন্ধু এবং কাফেরদের কোন হিতৈষী বন্ধু নাই।
12. যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার নিম্নদেশে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আর যারা কাফের, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুস্পদ জন্তুর মত আহার করে। তাদের বাসস্থান জাহান্নাম।
13. যে জনপদ আপনাকে বহিস্কার করেছে, তদপেক্ষা কত শক্তিশালী জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি, অতঃপর তাদেরকে সাহায্য করার কেউ ছিল না।
14. যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত নিদর্শন অনুসরণ করে, সে কি তার সমান, যার কাছে তার মন্দ কর্ম শোভনীয় করা হয়েছে এবং যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে।
15. পরহেযগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপঃ তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর যারা স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেযগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি অতঃপর তা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে?
16. তাদের মধ্যে কতক আপনার দিকে কান পাতে, অতঃপর যখন আপনার কাছ থেকে বাইরে যায়, তখন যারা শিক্ষিত, তাদেরকে বলেঃ এইমাত্র তিনি কি বললেন ? এদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারা নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে।
17. যারা সৎপথপ্রাপ্ত হয়েছে, তাদের সৎপথপ্রাপ্তি আরও বেড়ে যায় এবং আল্লাহ তাদেরকে তাকওয়া দান করেন।
18. তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, কেয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। বস্তুতঃ কেয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কেয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে ?
19. জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ক্রটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ, তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত।
20. যারা মুমিন, তারা বলেঃ একটি সূরা নাযিল হয় না কেন? অতঃপর যখন কোন দ্ব্যর্থহীন সূরা নাযিল হয় এবং তাতে জেহাদের উল্লেখ করা হয়, তখন যাদের অন্তরে রোগ আছে, আপনি তাদেরকে মৃত্যুভয়ে মূর্ছাপ্রাপ্ত মানুষের মত আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখবেন। সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্যে।
21. তাদের আনুগত্য ও মিষ্ট বাক্য জানা আছে। অতএব, জেহাদের সিন্ধান্ত হলে যদি তারা আল্লাহর প্রতি পদত্ত অংগীকার পূর্ণ করে, তবে তাদের জন্যে তা মঙ্গলজনক হবে।
22. ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে।
23. এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।
24. তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?
25. নিশ্চয় যারা সোজা পথ ব্যক্ত হওয়ার পর তৎপ্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে, শয়তান তাদের জন্যে তাদের কাজকে সুন্দর করে দেখায় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা দেয়।
26. এটা এজন্য যে, তারা তাদেরকে বলে, যারা আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব অপছন্দ করেঃ আমরা কোন কোন ব্যাপারে তোমাদের কথা মান্য করব। আল্লাহ তাদের গোপন পরামর্শ অবগত আছেন।
27. ফেরেশতা যখন তাদের মুখমন্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে?
28. এটা এজন্যে যে, তারা সেই বিষয়ের অনুসরণ করে, যা আল্লাহর অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অপছন্দ করে। ফলে তিনি তাদের কর্মসমূহ ব্যর্থ করে দেন।
29. যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা কি মনে করে যে, আল্লাহ তাদের অন্তরের বিদ্বেষ প্রকাশ করে দেবেন না?
30. আমি ইচ্ছা করলে আপনাকে তাদের সাথে পরিচিত করে দিতাম। তখন আপনি তাদের চেহারা দেখে তাদেরকে চিনতে পারতেন এবং আপনি অবশ্যই কথার ভঙ্গিতে তাদেরকে চিনতে পারবেন। আল্লাহ তোমাদের কর্মসমূহের খবর রাখেন।
31. আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যে পর্যন্ত না ফুটিয়ে তুলি তোমাদের জেহাদকারীদেরকে এবং সবরকারীদেরকে এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থান সমূহ যাচাই করি।
32. নিশ্চয় যারা কাফের এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে এবং নিজেদের জন্যে সৎপথ ব্যক্ত হওয়ার পর রসূলের (সঃ) বিরোধিতা করে, তারা আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না এবং তিনি ব্যর্থ করে দিবেন তাদের কর্মসমূহকে।
33. হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রসূলের (সাঃ) আনুগত্য কর এবং নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।
34. নিশ্চয় যারা কাফের এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে, অতঃপর কাফের অবস্থায় মারা যায়, আল্লাহ কখনই তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।
35. অতএব, তোমরা হীনবল হয়ো না এবং সন্ধির আহবান জানিও না, তোমরাই হবে প্রবল। আল্লাহই তোমাদের সাথে আছেন। তিনি কখনও তোমাদের কর্ম হ্রাস করবেন না।
36. পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধুলা, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও এবং সংযম অবলম্বন কর, আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিদান দেবেন এবং তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ চাইবেন না।
37. তিনি তোমাদের কাছে ধন-সম্পদ চাইলে অতঃপর তোমাদেরকে অতিষ্ঠ করলে তোমরা কার্পণ্য করবে এবং তিনি তোমাদের মনের সংকীর্ণতা প্রকাশ করে দেবেন।
38. শুন, তোমরাই তো তারা, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহবান জানানো হচ্ছে, অতঃপর তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে। যারা কৃপণতা করছে, তারা নিজেদের প্রতিই কৃপণতা করছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্থ। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এরপর তারা তোমাদের মত হবে না।