বেসিক সূরা তথ্য
সূরা নম্বর – 32
আয়াত সংখ্যা – 30
প্রকাশিত শহর – মক্কা
পারা বিবরণ – পারা 21 আয়াত 1-30
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 415 তম পৃষ্ঠা
সূরা আস-সাজদার সারাংশ
সূরা আস-সাজদাহ, যার অর্থ “সিজদা,” হল কুরআনের ৩২তম সূরা। এটি 30টি আয়াত নিয়ে গঠিত এবং এতে আল্লাহর নিদর্শন, বিচার দিবসের বাস্তবতা এবং উপাসনায় সিজদার তাৎপর্য চেনার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সূরাটি শুরু হয়েছে একটি নির্দেশিকা এবং প্রজ্ঞার উৎস হিসেবে কুরআনের নাযিলকে তুলে ধরে। এটি জোর দেয় যে যারা এর আয়াতগুলির প্রতি চিন্তাভাবনা করে এবং এর নির্দেশিকা অনুসরণ করে তারা ইহকাল ও পরকালে সফলতা অর্জন করবে।
সূরা আস-সাজদাতে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং আল্লাহর অস্তিত্ব ও ক্ষমতার নিদর্শন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এটি বিশ্বাসীদের সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা করতে এবং আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং সমস্ত কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দিতে উত্সাহিত করে৷
সূরাটি বিচার দিবস এবং পুনরুত্থানের বাস্তবতার উপর জোর দেয়। এটি মানুষকে তাদের কবর থেকে বের করে আনার এবং আল্লাহর সামনে তাদের কর্মের জন্য জবাবদিহি করার দৃশ্য বর্ণনা করে। এটি বিশ্বাসীদের মনে করিয়ে দেয় যে তারা তাদের ভাল কাজের জন্য পুরস্কৃত হবে এবং অবিশ্বাসীরা তাদের অবিশ্বাসের পরিণতির মুখোমুখি হবে।
সূরা আস-সাজদা আল্লাহর কাছে নম্রতা, কৃতজ্ঞতা এবং আত্মসমর্পণের মাধ্যম হিসেবে উপাসনায় সিজদার গুরুত্ব তুলে ধরে। এটি প্রার্থনায় বিশ্বাসীদের সেজদা এবং আল্লাহর মহত্ত্ব ও কর্তৃত্বের স্বীকৃতির বর্ণনা করে৷
সূরাটিতে ইসলামের বার্তার প্রতি মানুষের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা হয়েছে। এটি স্বীকার করে যে কিছু নির্দেশিকা গ্রহণ করবে এবং অন্যরা তা প্রত্যাখ্যান করবে। এটি বিশ্বাসীদেরকে আশ্বস্ত করে যে, তারা তাদের বিশ্বাসে ধৈর্যশীল এবং অবিচল থাকা উচিত, তারা যে বিরোধিতার মুখোমুখি হতে পারে না কেন।
সূরা আস-সাজদা কুরআনের সত্যতা এবং এর নির্দেশনা অনুসরণের গুরুত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে শেষ হয়েছে। এটি জোর দিয়ে বলে যে আল্লাহ মানুষের উদ্দেশ্য এবং কাজ সহ সবকিছু সম্পর্কে অবগত। এটি বিশ্বাসীদের মনে করিয়ে দেয় যে তারা পরকালে তাদের পছন্দ এবং কর্মের জন্য দায়বদ্ধ হবে।
সংক্ষেপে, সূরা আস-সাজদা আল্লাহর নিদর্শন, বিচার দিবসের বাস্তবতা এবং ইবাদতে সিজদার তাৎপর্যের বিষয়বস্তুর উপর আলোকপাত করে। এটি সৃষ্টির উপর প্রতিফলনকে উৎসাহিত করে, কুরআনের নির্দেশনা অনুসরণের গুরুত্বের উপর জোর দেয় এবং বিশ্বাসীদেরকে তাদের বিশ্বাসে ধৈর্য্য ও অবিচল থাকার আহ্বান জানায়। সূরাটি বিশ্বাসীদেরকে পরকালে যে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে সে সম্পর্কেও স্মরণ করিয়ে দেয় এবং নির্দেশনার উৎস হিসেবে কুরআনের সত্যতা নিশ্চিত করে।
বাংলায় সূরা আস-সাজদাহ এর অনুবাদিত সংস্করণ পড়ুন
1. আলিফ-লাম-মীম।
2. এ কিতাবের অবতরণ বিশ্বপালনকর্তার নিকট থেকে এতে কোন সন্দেহ নেই।
3. তারা কি বলে, এটা সে মিথ্যা রচনা করেছে? বরং এটা আপনার পালনকর্তার তরফ থেকে সত্য, যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন, যাদের কাছে আপনার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি। সম্ভবতঃ এরা সুপথ প্রাপ্ত হবে।
4. আল্লাহ যিনি নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে বিরাজমান হয়েছেন। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী নেই। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না?
5. তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন, অতঃপর তা তাঁর কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।
6. তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু,
7. যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।
8. অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।
9. অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
10. তারা বলে, আমরা মৃত্তিকায় মিশ্রিত হয়ে গেলেও পুনরায় নতুন করে সৃজিত হব কি? বরং তারা তাদের পালনকর্তার সাক্ষাতকে অস্বীকার করে।
11. বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।
12. যদি আপনি দেখতেন যখন অপরাধীরা তাদের পালনকর্তার সামনে নতশির হয়ে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম। এখন আমাদেরকে পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। আমরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়ে গেছি।
13. আমি ইচ্ছা করলে প্রত্যেককে সঠিক দিক নির্দেশ দিতাম; কিন্তু আমার এ উক্তি অবধারিত সত্য যে, আমি জিন ও মানব সকলকে দিয়ে অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব।
14. অতএব এ দিবসকে ভূলে যাওয়ার কারণে তোমরা মজা আস্বাদন কর। আমিও তোমাদেরকে ভুলে গেলাম। তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে স্থায়ী আযাব ভোগ কর।
15. কেবল তারাই আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে, যারা আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং অহংকারমুক্ত হয়ে তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে।
16. তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।
17. কেউ জানে না তার জন্যে কৃতকর্মের কি কি নয়ন-প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে।
18. ঈমানদার ব্যক্তি কি অবাধ্যের অনুরূপ? তারা সমান নয়।
19. যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়নস্বরূপ বসবাসের জান্নাত।
20. পক্ষান্তরে যারা অবাধ্য হয়, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। যখনই তারা জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের যে আযাবকে মিথ্যা বলতে, তার স্বাদ আস্বাদন কর।
21. গুরু শাস্তির পূর্বে আমি অবশ্যই তাদেরকে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।
22. যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব।
23. আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি, অতএব আপনি কোরআন প্রাপ্তির বিষয়ে কোন সন্দেহ করবেন না। আমি একে বনী ইসরাঈলের জন্যে পথ প্রদর্শক করেছিলাম।
24. তারা সবর করত বিধায় আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার আদেশে পথ প্রদর্শন করত। তারা আমার আয়াতসমূহে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল।
25. তারা যে বিষয়ে মত বিরোধ করছে, আপনার পালনকর্তাই কেয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফয়সালা দেবেন।
26. এতে কি তাদের চোখ খোলেনি যে, আমি তাদের পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, যাদের বাড়ী-ঘরে এরা বিচরণ করে। অবশ্যই এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তারা কি শোনে না?
27. তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি উষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে শস্য উদগত করি, যা থেকে ভক্ষণ করে তাদের জন্তুরা এবং তারা কি দেখে না?
28. তারা বলে তোমরা সত্যবাদী হলে বল; কবে হবে এই ফয়সালা?
29. বলুন, ফয়সালার দিনে কাফেরদের ঈমান তাদের কোন কাজে আসবে না এবং তাদেরকে অবকাশ ও দেয়া হবে না।
30. অতএব আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং অপেক্ষা করুন, তারাও অপেক্ষা করছে।