বেসিক সূরা তথ্য
সূরা নম্বর – 31
আয়াত সংখ্যা – 34
প্রকাশিত শহর – মক্কা
পারা বিবরণ – পারা 21 আয়াত 1-34
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 411 তম পৃষ্ঠা
সূরা লুকমানের সারাংশ
সূরা লুকমান হল কুরআনের ৩১তম সূরা, এতে ৩৪টি আয়াত রয়েছে। এটি লুকমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে, সূরাতে উল্লেখিত একজন জ্ঞানী ব্যক্তি যিনি তার পুত্রকে জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। সূরাটি প্রাথমিকভাবে জ্ঞান, কৃতজ্ঞতা এবং আল্লাহর নির্দেশনার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করে।
সূরা লুকমান শুরু হয়েছে আল্লাহর কাছ থেকে নির্দেশনা চাওয়ার তাৎপর্য তুলে ধরে এবং তাঁর নির্দেশ অনুসরণ করে। এটি জোর দেয় যে সত্যিকারের জ্ঞান আল্লাহর কাছ থেকে আসে এবং বিশ্বাসীদেরকে জ্ঞান অন্বেষণ করতে এবং এর উপর কাজ করতে উৎসাহিত করে।
সূরাটি তার ছেলের প্রতি লুকমানের উপদেশ উল্লেখ করে, একেশ্বরবাদের গুরুত্বের উপর জোর দেয়, শিরক পরিহার করে এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। লুকমান তার ছেলেকে নম্র হতে, তার পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং আল্লাহ ও সহ-মানুষের প্রতি তার দায়বদ্ধতা পালন করার পরামর্শ দেন।
সূরা লুকমান অহংকার, অবাধ্যতা এবং আল্লাহর সাথে শরীক করার পরিণতির উপর জোর দিয়েছে। এটি কাফেরদের পথ অনুসরণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে এবং বিশ্বাসীদেরকে তাদের বিশ্বাস ও সৎকর্ম বজায় রাখতে উৎসাহিত করে।
সূরাটি পার্থিব সম্পদের ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতি এবং দায়িত্বশীল ও উপকারী উপায়ে সম্পদ ও আশীর্বাদ ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরে। এটি জবাবদিহিতার ধারণার উপর জোর দেয় এবং বিচার দিবসের বিশ্বাসীদের স্মরণ করিয়ে দেয়।
সুরা লুকমান মুমিনদেরকে কষ্টের সময়ে ধৈর্য ও অধ্যবসায় রাখতে উৎসাহিত করে। এটি তাদের আশ্বস্ত করে যে আল্লাহ তাদের সংগ্রাম সম্পর্কে অবগত এবং তাদের দৃঢ়তার জন্য তাদের পুরস্কৃত করবেন।
সূরাটি সৃষ্টিতে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতিফলনের গুরুত্বের উপর জোর দেয়, যেমন রাত ও দিনের পরিবর্তন, মহাকাশীয় বস্তু এবং ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এটি বিশ্বাসীদেরকে এই নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তা করতে এবং আল্লাহর সৃষ্টির মহত্ত্ব চিনতে উৎসাহিত করে৷
সূরা লুকমান শেষ হয়েছে সালাত কায়েম করার গুরুত্ব, ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করার মাধ্যমে। এটি বিশ্বাসীদেরকে তাদের কর্ম সম্পর্কে সচেতন হতে এবং ধার্মিকতার জন্য প্রচেষ্টা করতে উত্সাহিত করে৷
সংক্ষেপে, সূরা লুকমান প্রজ্ঞা, কৃতজ্ঞতা এবং আল্লাহর নির্দেশনার বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করে। এটি অহংকার, অবিশ্বাস এবং আল্লাহর সাথে অংশীদার করার বিরুদ্ধে সতর্ক করার সাথে সাথে জ্ঞান অন্বেষণ এবং তার উপর আমল করার গুরুত্ব তুলে ধরে। সূরাটি আল্লাহর নিদর্শনগুলির প্রতি প্রতিফলনকে উত্সাহিত করে এবং নম্রতা, কৃতজ্ঞতা এবং ধৈর্যের মূল্যবোধের উপর জোর দেয়। এটি শেষ হয় মুমিনদেরকে প্রার্থনা কায়েম করার, ভালো কাজের নির্দেশ দেওয়ার এবং তাদের জীবনে মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করার জন্য।
বাংলায় সূরা লুকমানের অনুবাদিত সংস্করণ পড়ুন
1. আলিফ-লাম-মীম।
2. এগুলো প্রজ্ঞাময় কিতাবের আয়াত।
3. হেদায়েত ও রহমত সৎকর্মপরায়ণদের জন্য।
4. যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আখেরাত সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।
5. এসব লোকই তাদের পরওয়ারদেগারের তরফ থেকে আগত হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এরাই সফলকাম।
6. একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।
7. যখন ওদের সামনে আমার আয়তসমূহ পাঠ করা হয়, তখন ওরা দম্ভের সাথে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন ওরা তা শুনতেই পায়নি অথবা যেন ওদের দু’কান বধির। সুতরাং ওদেরকে কষ্টদায়ক আযাবের সংবাদ দাও।
8. যারা ঈমান আনে আর সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামতে ভরা জান্নাত।
9. সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহর ওয়াদা যথার্থ। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।
10. তিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন; তোমরা তা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্বপ্রকার জন্তু। আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছি, অতঃপর তাতে উদগত করেছি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদরাজি।
11. এটা আল্লাহর সৃষ্টি; অতঃপর তিনি ব্যতীত অন্যেরা যা সৃষ্টি করেছে, তা আমাকে দেখাও। বরং জালেমরা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় পতিত আছে।
12. আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল নিজ কল্যানের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
13. যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বললঃ হে বৎস, আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।
14. আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।
15. পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো।
16. হে বৎস, কোন বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় অতঃপর তা যদি থাকে প্রস্তর গর্ভে অথবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে, তবে আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ গোপন ভেদ জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন।
17. হে বৎস, নামায কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ।
18. অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।
19. পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।
20. তোমরা কি দেখ না আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ন করে দিয়েছেন? এমন লোক ও আছে; যারা জ্ঞান, পথনির্দেশ ও উজ্জল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বাকবিতন্ডা করে।
21. তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তোমরা তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে, বরং আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব। শয়তান যদি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে দাওয়াত দেয়, তবুও কি?
22. যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমূখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে, সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর দিকে।
23. যে ব্যক্তি কুফরী করে তার কুফরী যেন আপনাকে চিন্তিত না করে। আমারই দিকে তাদের প্রত্যাবর্তন, অতঃপর আমি তাদের কর্ম সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করব। অন্তরে যা কিছু রয়েছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ পরিজ্ঞাত।
24. আমি তাদেরকে স্বল্পকালের জন্যে ভোগবিলাস করতে দেব, অতঃপর তাদেরকে বাধ্য করব গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে।
25. আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল কে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। বলুন, সকল প্রশংসাই আল্লাহর। বরং তাদের অধিকাংশই জ্ঞান রাখে না।
26. নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহর। আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
27. পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও তাঁর বাক্যাবলী লিখে শেষ করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
28. তোমাদের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি মাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের সমান বৈ নয়। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন।
29. তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন?
30. এটাই প্রমাণ যে, আল্লাহ-ই সত্য এবং আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে সব মিথ্যা। আল্লাহ সর্বোচ্চ, মহান।
31. তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহর অনুগ্রহে জাহাজ সমুদ্রে চলাচল করে, যাতে তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করেন? নিশ্চয় এতে প্রত্যেক সহনশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে নিদর্শন রয়েছে।
32. যখন তাদেরকে মেঘমালা সদৃশ তরংগ আচ্ছাদিত করে নেয়, তখন তারা খাঁটি মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে স্থলভাগের দিকে উদ্ধার করে আনেন, তখন তাদের কেউ কেউ সরল পথে চলে। কেবল মিথ্যাচারী, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে।
33. হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে।
34. নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।