বেসিক সূরা তথ্য
সূরা নম্বর – 67
আয়াত সংখ্যা – 30
প্রকাশিত শহর – মক্কা
জুজ বিবরণ – জুজ 29 আয়াত 1-30
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 562 তম পৃষ্ঠা
সূরা আল-মুলকের সারাংশ
সূরা আল-মুলক, কুরআনের 67 তম সূরা, আল্লাহর সৃষ্টির মহিমা, তাঁর আধিপত্যের সার্বভৌমত্ব এবং তাঁর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে। সূরায় “আল-মুলক” (সার্বভৌমত্ব) এর উল্লেখ থেকে এর নাম এসেছে। এটি 30টি শ্লোক নিয়ে গঠিত৷
সূরাটি শুরু হয়েছে জোর দিয়ে যে সমস্ত আধিপত্য ও সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর। এটি আকাশ ও পৃথিবী, মহাকাশীয় বস্তু এবং মহাবিশ্বের জটিল নকশার তাঁর সৃষ্টিকে হাইলাইট করে। এটা আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শনগুলোর প্রতি তার শক্তি ও প্রজ্ঞাকে চেনার উপায় হিসেবে প্রতিফলনকে উৎসাহিত করে।
সূরা আল-মুলক পার্থিব সম্পদের অস্থায়ী প্রকৃতি এবং মানুষের অস্তিত্বের ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির উপর জোর দেয়। এটি বিশ্বাসীদের মৃত্যুর অনিবার্যতা এবং পরবর্তী দায়বদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দেয়। এটি তাদের ধার্মিকতা এবং ভাল কাজের জন্য তাদের সময় এবং সম্পদ বিজ্ঞতার সাথে ব্যবহার করতে উত্সাহিত করে৷
সূরাটি অবিশ্বাসের পরিণতি এবং আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যাখ্যানের উপর জোর দেয়। এটি সত্যকে অস্বীকারকারীদের পথ অনুসরণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে এবং বিশ্বাসীদেরকে ইসলামের শিক্ষা মেনে চলতে উত্সাহিত করে৷
সূরা আল-মুলক তাঁর সৃষ্টির প্রতি আল্লাহর রহমত ও আশীর্বাদ তুলে ধরে। এটি সমস্ত কিছুর বিষয়ে তাঁর জ্ঞান এবং প্রাণহীনতা থেকে জীবন নিয়ে আসার তাঁর ক্ষমতার উপর জোর দেয়। এটি বিশ্বাসীদের আশ্বস্ত করে যে আল্লাহ তাদের কর্ম ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত এবং তিনিই পথনির্দেশ ও সুরক্ষার চূড়ান্ত উৎস৷
সূরাটি আল্লাহর আদেশের শক্তি এবং কেয়ামতের দিন পুনরুত্থান ও বিচার করার ক্ষমতার উপর জোর দেয়। এটি বিশ্বাসীদের তাদের কাজের তাৎপর্যের কথা মনে করিয়ে দেয় এবং বিচার দিবসের প্রত্যাশায় ধার্মিকতার জন্য সংগ্রাম করতে উত্সাহিত করে৷
সূরা আল-মুলক আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং সমস্ত বিষয়ে তাঁর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে শেষ হয়েছে। এটি বিশ্বাসীদেরকে তাঁর উপর আস্থা রাখতে এবং তাঁর ক্ষমা ও করুণা চাইতে উৎসাহিত করে। এটি তাদের আশ্বস্ত করে যে আল্লাহই চূড়ান্ত অভিভাবক এবং তাঁর করুণা সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে।
সংক্ষেপে, সূরা আল-মুলক আল্লাহর সৃষ্টির মহিমা, পার্থিব সম্পদের অস্থায়ী প্রকৃতি এবং তাঁর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে। এটি আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শনগুলোর প্রতি প্রতিফলনকে উৎসাহিত করে এবং অবিশ্বাসের পরিণতির ওপর জোর দেয়। সূরাটি আল্লাহর রহমত ও আশীর্বাদ, সৎ কাজের তাৎপর্য এবং বিচার দিবসের নিশ্চিততার উপর জোর দেয়। এটি আল্লাহর উপর আস্থা রাখার, তাঁর ক্ষমা চাওয়া এবং ধার্মিকতার জন্য প্রচেষ্টা করার জন্য একটি অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে৷
বাংলায় সূরা আল-মুলক এর অনুবাদ পড়ুন
1. পূণ্যময় তিনি, যাঁর হাতে রাজত্ব। তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
2. যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।
3. তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিতে কোন তফাত দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টিফেরাও; কোন ফাটল দেখতে পাও কি?
4. অতঃপর তুমি বার বার তাকিয়ে দেখ-তোমার দৃষ্টি ব্যর্থ ও পরিশ্রান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।
5. আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি।
6. যারা তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান।
7. যখন তারা তথায় নিক্ষিপ্ত হবে, তখন তার উৎক্ষিপ্ত গর্জন শুনতে পাবে।
8. ক্রোধে জাহান্নাম যেন ফেটে পড়বে। যখনই তাতে কোন সম্প্রদায় নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে তার সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করবে। তোমাদের কাছে কি কোন সতর্ককারী আগমন করেনি?
9. তারা বলবেঃ হ্যাঁ আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ তা’আলা কোন কিছু নাজিল করেননি। তোমরা মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ।
10. তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না।
11. অতঃপর তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করবে। জাহান্নামীরা দূর হোক।
12. নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।
13. তোমরা তোমাদের কথা গোপনে বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কে সম্যক অবগত।
14. যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি করে জানবেন না? তিনি সূক্ষ্নজ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত।
15. তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে সুগম করেছেন, অতএব, তোমরা তার কাঁধে বিচরণ কর এবং তাঁর দেয়া রিযিক আহার কর। তাঁরই কাছে পুনরুজ্জীবন হবে।
16. তোমরা কি ভাবনামুক্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দেবেন, অতঃপর তা কাঁপতে থাকবে।
17. না তোমরা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, অতঃপর তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী।
18. তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছিল, অতঃপর কত কঠোর হয়েছিল আমার অস্বীকৃতি।
19. তারা কি লক্ষ্য করে না, তাদের মাথার উপর উড়ন্ত পক্ষীকুলের প্রতি পাখা বিস্তারকারী ও পাখা সংকোচনকারী? রহমান আল্লাহ-ই তাদেরকে স্থির রাখেন। তিনি সর্ব-বিষয় দেখেন।
20. রহমান আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত তোমাদের কোন সৈন্য আছে কি, যে তোমাদেরকে সাহায্য করবে? কাফেররা বিভ্রান্তিতেই পতিত আছে।
21. তিনি যদি রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে আছে, যে তোমাদেরকে রিযিক দিবে বরং তারা অবাধ্যতা ও বিমুখতায় ডুবে রয়েছে।
22. যে ব্যক্তি উপুড় হয়ে মুখে ভর দিয়ে চলে, সে-ই কি সৎ পথে চলে, না সে ব্যক্তি যে সোজা হয়ে সরলপথে চলে?
23. বলুন, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
24. বলুন, তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করেছেন এবং তাঁরই কাছে তোমরা সমবেত হবে।
25. কাফেররা বলেঃ এই প্রতিশ্রুতি কবে হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?
26. বলুন, এর জ্ঞান আল্লাহ তা’আলার কাছেই আছে। আমি তো কেবল প্রকাশ্য সতর্ককারী।
27. যখন তারা সেই প্রতিশ্রুতিকে আসন্ন দেখবে তখন কাফেরদের মুখমন্ডল মলিন হয়ে পড়বে এবং বলা হবেঃ এটাই তো তোমরা চাইতে।
28. বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ-যদি আল্লাহ তা’আলা আমাকে ও আমার সংগীদেরকে ধ্বংস করেন অথবা আমাদের প্রতি দয়া করেন, তবে কাফেরদেরকে কে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?
29. বলুন, তিনি পরম করুণাময়, আমরা তাতে বিশ্বাস রাখি এবং তাঁরই উপর ভরসা করি। সত্ত্বরই তোমরা জানতে পারবে, কে প্রকাশ্য পথ-ভ্রষ্টতায় আছে।
30. বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদেরকে সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা?