বেসিক সূরা তথ্য
সূরা নম্বর – 23
আয়াত সংখ্যা – 118
প্রকাশিত শহর – মক্কা
পারা বিবরণ – পারা 18 আয়াত 1-118
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 342 তম পৃষ্ঠা
সূরা আল-মুমিনুনের সারাংশ
সূরা আল-মুমিনুন, যার অর্থ “বিশ্বাসীরা” হল কুরআনের ২৩তম সূরা। এটি 118টি আয়াত নিয়ে গঠিত এবং এতে সত্য বিশ্বাসীদের গুণাবলী এবং বৈশিষ্ট্য এবং অবিশ্বাসের পরিণতিগুলির উপর আলোকপাত করা হয়েছে৷
সূরা আল-মুমিনুন শুরু হয়েছে সফল মুমিনদের গুণাবলী তুলে ধরে। এটি তাদের বর্ণনা করে যারা তাদের প্রার্থনায় নিজেদেরকে নম্র করে, অনর্থক এবং অসার কথা এড়িয়ে চলে, দান করে এবং তাদের সতীত্ব রক্ষা করে।
সূরাটি অদৃশ্য এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাসের গুরুত্বের উপর জোর দেয়। এটি একটি নম্র উত্স থেকে মানুষের সৃষ্টি এবং গর্ভে বৃদ্ধি এবং বিকাশের ক্রমাগত প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে৷
সূরা আল-মুমিনুন নৈতিকতা এবং নৈতিক আচরণের বিভিন্ন দিক সম্বোধন করে। এটি অহংকার, মিথ্যা, গীবত এবং ব্যভিচারের মতো আচরণের নিন্দা করে। এটি বিশ্বাসীদেরকে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে, তাদের প্রতিশ্রুতিগুলিকে সম্মান করতে এবং তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে উত্সাহিত করে৷
সূরাটি প্রার্থনার গুরুত্ব এবং আল্লাহর নৈকট্য কামনা করে। এটি উপাসনার ক্ষেত্রে নম্রতা এবং আন্তরিকতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মধ্যেই সফলতা নিহিত রয়েছে।
সূরা আল মুমিনুন অতীতের নবীদের কাহিনী এবং তাদের লোকদের কাছ থেকে তারা যে বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল সে সম্পর্কে আলোচনা করেছে। এটি একেশ্বরবাদ এবং ধার্মিকতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য হযরত নূহ, হযরত মুসা এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সংগ্রামকে তুলে ধরে৷
সূরাটি অবিশ্বাসের পরিণতি এবং বিচার দিবসকে সম্বোধন করে। এটি অবিশ্বাসীদের শাস্তির বিষয়ে সতর্ক করে যা তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এবং পরকালের জন্য প্রস্তুতির গুরুত্বের উপর জোর দেয়।
সূরা আল-মুমিনুন মহাবিশ্ব এবং প্রাকৃতিক জগতে আল্লাহর নিদর্শনগুলির উপরও জোর দেয়। এটি আল্লাহর শক্তি এবং অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি উপায় হিসাবে এই লক্ষণগুলির প্রতিফলনকে উত্সাহিত করে৷
সূরাটি মৃত্যুর পরে জীবন এবং পুনরুত্থানের ধারণা নিয়ে আলোচনা করে। এটি কর্মের জবাবদিহিতা এবং পরকালে যে প্রতিদান অপেক্ষা করছে তার উপর জোর দেয়।
সূরা আল-মুমিনুন আল্লাহর নির্দেশনা এবং কুরআনের শিক্ষা অনুসরণের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে শেষ করেছে। এটা বিশ্বাসীদেরকে তাদের বিশ্বাসে অটল থাকতে, ভালো কাজ করতে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করে।
সংক্ষেপে, সূরা আল-মুমিনুন প্রকৃত মুমিনদের গুণাবলী এবং বৈশিষ্ট্যের উপর আলোকপাত করে। এটি অদৃশ্য, নৈতিক আচরণ এবং আন্তরিক উপাসনার উপর বিশ্বাসের গুরুত্বের উপর জোর দেয়। সূরাটি অবিশ্বাসের বিরুদ্ধে সতর্ক করে, নবীদের সংগ্রামের কথা তুলে ধরে এবং পরকালে কর্মের পরিণতি নিয়ে আলোচনা করে। এটি বিশ্বাসীদের জন্য ধার্মিকতার জন্য সংগ্রাম করার, আল্লাহর নৈকট্য অন্বেষণ করতে এবং বিচারের দিনের জন্য প্রস্তুত করার জন্য একটি অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে৷
বাংলায় সূরা আল-মুমিনুনের অনুবাদিত সংস্করণ পড়ুন
1. মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে,
2. যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র;
3. যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত,
4. যারা যাকাত দান করে থাকে
5. এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে।
6. তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।
7. অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে।
8. এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে।
9. এবং যারা তাদের নামাযসমূহের খবর রাখে।
10. তারাই উত্তরাধিকার লাভ করবে।
11. তারা শীতল ছায়াময় উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা তাতে চিরকাল থাকবে।
12. আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।
13. অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।
14. এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়।
15. এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে
16. অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে।
17. আমি তোমাদের উপর সুপ্তপথ সৃষ্টি করেছি এবং আমি সৃষ্টি সম্বন্ধে অনবধান নই।
18. আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত অতঃপর আমি জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম।
19. অতঃপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্যে খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তোমাদের জন্যে এতে প্রচুর ফল আছে এবং তোমরা তা থেকে আহার করে থাক।
20. এবং ঐ বৃক্ষ সৃষ্টি করেছি, যা সিনাই পর্বতে জন্মায় এবং আহারকারীদের জন্যে তৈল ও ব্যঞ্জন উৎপন্ন করে।
21. এবং তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তু সমূহের মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থিত বস্তু থেকে পান করাই এবং তোমাদের জন্যে তাদের মধ্যে প্রচুর উপকারিতা আছে। তোমরা তাদের কতককে ভক্ষণ কর।
22. তাদের পিঠে ও জলযানে তোমরা আরোহণ করে চলাফেরা করে থাক।
23. আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। সে বলেছিলঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন মাবুদ নেই। তোমরা কি ভয় কর না।
24. তখন তার সম্প্রদায়ের কাফের-প্রধানরা বলেছিলঃ এ তো তোমাদের মতই একজন মানুষ বৈ নয়। সে তোমাদের উপর নেতৃত্ব করতে চায়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে ফেরেশতাই নাযিল করতেন। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এরূপ কথা শুনিনি।
25. সে তো এক উম্মাদ ব্যক্তি বৈ নয়। সুতরাং কিছুকাল তার ব্যাপারে অপেক্ষা কর।
26. নূহ বলেছিলঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে সাহায্য কর; কেননা, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।
27. অতঃপর আমি তার কাছে আদেশ প্রেরণ করলাম যে, তুমি আমার দৃষ্টির সামনে এবং আমার নির্দেশে নৌকা তৈরী কর। এরপর যখন আমার আদেশ আসে এবং চুল্লী প্লাবিত হয়, তখন নৌকায় তুলে নাও, প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবারবর্গকে, তাদের মধ্যে যাদের বিপক্ষে পূর্বে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাদের ছাড়া। এবং তুমি জালেমদের সম্পর্কে আমাকে কিছু বলো না। নিশ্চয় তারা নিমজ্জত হবে।
28. যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌকায় আরোহণ করবে, তখন বলঃ আল্লাহর শোকর, যিনি আমাদেরকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে উদ্ধার করেছেন।
29. আরও বলঃ পালনকর্তা, আমাকে কল্যাণকর ভাবে নামিয়ে দাও, তুমি শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী।
30. এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে এবং আমি পরীক্ষাকারী।
31. অতঃপর অন্য এক সম্প্রদায় আমি তার স্থলাভিষিক্ত করেছিলাম।
32. এবং তাদেরই একজনকে তাদের মধ্যে রসূলরূপে প্রেরণ করেছিলাম এই বলে যে, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন মাবুদ নেই। তবুও কি তোমরা ভয় করবে না?
33. তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানরা যারা কাফের ছিল, পরকালের সাক্ষাতকে মিথ্যা বলত এবং যাদেরকে আমি পার্থিব জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছিলাম, তারা বললঃ এতো আমাদের মতই একজন মানুষ বৈ নয়। তোমরা যা খাও, সেও তাই খায় এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে।
34. যদি তোমরা তোমাদের মতই একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
35. সে কি তোমাদেরকে এই ওয়াদা দেয় যে, তোমরা মারা গেলে এবং মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হলে তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে?
36. তোমাদেরকে যে ওয়াদা দেয়া হচ্ছে, তা কোথায় হতে পারে?
37. আমাদের পার্থিবজীবনই একমাত্র জীবন। আমরা মরি ও বাঁচি এখানেই এবং আমারা পুনরুত্থিত হবো না।
38. সে তো এমন ব্যক্তি বৈ নয়, যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে এবং আমরা তাকে বিশ্বাস করি না।
39. তিনি বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে সাহায্য কর, কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।
40. আল্লাহ বললেনঃ কিছু দিনের মধ্যে তারা সকাল বেলা অনুতপ্ত হবে।
41. অতঃপর সত্য সত্যই এক ভয়ংকর শব্দ তাদেরকে হতচকিত করল এবং আমি তাদেরকে বাত্যা-তাড়িত আবর্জনা সদৃশ করে দিলাম। অতঃপর ধ্বংস হোক পাপী সম্প্রদায়।
42. এরপর তাদের পরে আমি বহু সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি।
43. কোন সম্প্রদায় তার নির্দিষ্ট কালের অগ্রে যেতে পারে না। এবং পশ্চাতেও থকাতে পারে না।
44. এরপর আমি একাদিক্রমে আমার রসূল প্রেরণ করেছি। যখনই কোন উম্মতের কাছে তাঁর রসূল আগমন করেছেন, তখনই তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলেছে। অতঃপর আমি তাদের একের পর এক ধ্বংস করেছি এবং তাদেরকে কাহিনীর বিষয়ে পরিণত করেছি। সুতরাং ধ্বংস হোক অবিশ্বাসীরা।
45. অতঃপর আমি মূসা ও হারুণকে প্রেরণ করেছিলাম আমার নিদর্শনাবলী ও সুস্পষ্ট সনদসহ,
46. ফেরআউন ও তার অমাত্যদের কাছে। অতঃপর তারা অহংকার করল এবং তারা উদ্ধত সম্প্রদায় ছিল।
47. তারা বললঃ আমরা কি আমাদের মতই এ দুই ব্যক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করব; অথচ তাদের সম্প্রদায় আমাদের দাস?
48. অতঃপর তারা উভয়কে মিথ্যাবাদী বলল। ফলে তারা ধ্বংস প্রাপ্ত হল।
49. আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম যাতে তারা সৎপথ পায়।
50. এবং আমি মরিয়ম তনয় ও তাঁর মাতাকে এক নিদর্শন দান করেছিলাম। এবং তাদেরকে এক অবস্থানযোগ্য স্বচ্ছ পানি বিশিষ্ট টিলায় আশ্রয় দিয়েছিলাম।
51. হে রসূলগণ, পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত।
52. আপনাদের এই উম্মত সব তো একই ধর্মের অনুসারী এবং আমি আপনাদের পালনকর্তা; অতএব আমাকে ভয় করুন।
53. অতঃপর মানুষ তাদের বিষয়কে বহুধা বিভক্ত করে দিয়েছে। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত হচ্ছে।
54. অতএব তাদের কিছু কালের জন্যে তাদের অজ্ঞানতায় নিমজ্জত থাকতে দিন।
55. তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে যাচ্ছি।
56. তাতে করে তাদেরকে দ্রুত মঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছি? বরং তারা বোঝে না।
57. নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তার ভয়ে সন্ত্রস্ত,
58. যারা তাদের পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে,
59. যারা তাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করে না
60. এবং যারা যা দান করবার, তা ভীত, কম্পিত হৃদয়ে এ কারণে দান করে যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে,
61. তারাই কল্যাণ দ্রুত অর্জন করে এবং তারা তাতে অগ্রগামী।
62. আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পন করি না। আমার এক কিতাব আছে, যা সত্য ব্যক্ত করে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।
63. না, তাদের অন্তর এ বিষয়ে অজ্ঞানতায় আচ্ছন্ন, এ ছাড়া তাদের আরও কাজ রয়েছে, যা তারা করছে।
64. এমনকি, যখন আমি তাদের ঐশ্বর্যশালী লোকদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করব, তখনই তারা চীৎকার জুড়ে দেবে।
65. অদ্য চীৎকার করো না। তোমরা আমার কাছ থেকে নিস্কৃতি পাবে না।
66. তোমাদেরকে আমার আয়াতসমূহ শোনানো হত, তখন তোমরা উল্টো পায়ে সরে পড়তে।
67. অহংকার করে এ বিষয়ে অর্থহীন গল্প-গুজব করে যেতে।
68. অতএব তারা কি এই কালাম সম্পêেক চিন্তা-ভাবনা করে না? না তাদের কাছে এমন কিছু এসেছে, যা তাদের পিতৃপুরুষদের কাছে আসেনি?
69. না তারা তাদের রসূলকে চেনে না, ফলে তারা তাঁকে অস্বীকার করে?
70. না তারা বলে যে, তিনি পাগল ? বরং তিনি তাদের কাছে সত্য নিয়ে আগমন করেছেন এবং তাদের অধিকাংশ সত্যকে অপছন্দ করে।
71. সত্য যদি তাদের কাছে কামনা-বাসনার অনুসারী হত, তবে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং এগুলোর মধ্যবর্তêী সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত। বরং আমি তাদেরকে দান করেছি উপদেশ, কিন্তু তারা তাদের উপদেশ অনুধাবন করে না।
72. না আপনি তাদের কাছে কোন প্রতিদান চান? আপনার পালনকর্তার প্রতিদান উত্তম এবং তিনিই রিযিকদাতা।
73. আপনি তো তাদেরকে সোজা পথে দাওয়াত দিচ্ছেন;
74. আর যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তারা সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে।
75. যদি আমি তাদের প্রতি দয়া করি এবং তাদের কষ্ট দূর করে দেই, তবুও তারা তাদের অবাধ্যতায় দিশেহারা হয়ে লেগে থাকবে।
76. আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম, কিন্তু তারা তাদের পালনকর্তার সামনে নত হল না এবং কাকুতি-মিনুতিও করল না।
77. অবশেষে যখন আমি তাদের জন্য কঠিন শাস্তির দ্বার খুলে দেব, তখন তাতে তাদের আশা ভঙ্গ হবে।
78. তিনি তোমাদের কান, চোখ ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন; তোমরা খুবই অল্প কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে থাক।
79. তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে রেখেছেন এবং তারই দিকে তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।
80. তিনিই প্রাণ দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান এবং দিবা-রাত্রির বিবর্তন তাঁরই কাজ, তবু ও কি তোমরা বুঝবে না?
81. বরং তারা বলে যেমন তাদের পূর্ববর্তীরা বলত।
82. তারা বলেঃ যখন আমরা মরে যাব এবং মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হব, তখনও কি আমরা পুনরুত্থিত হব ?
83. অতীতে আমাদেরকে এবং আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এই ওয়াদাই দেয়া হয়েছে। এটা তো পূর্ববতীদের কল্প-কথা বৈ কিছুই নয়।
84. বলুন পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে, তারা কার? যদি তোমরা জান, তবে বল।
85. এখন তারা বলবেঃ সবই আল্লাহর। বলুন, তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?
86. বলুনঃ সপ্তাকাশ ও মহা-আরশের মালিক কে?
87. এখন তারা বলবেঃ আল্লাহ। বলুন, তবুও কি তোমরা ভয় করবে না?
88. বলুনঃ তোমাদের জানা থাকলে বল, কার হাতে সব বস্তুর কতৃর্êত্ব, যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না ?
89. এখন তারা বলবেঃ আল্লাহর। বলুনঃ তাহলে কোথা থেকে তোমাদেরকে জাদু করা হচ্ছে?
90. কিছুই নয়, আমি তাদের কাছে সত্য পৌঁছিয়েছি, আর তারা তো মিথ্যাবাদী।
91. আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে কোন মাবুদ নেই। থাকলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেত এবং একজন অন্যজনের উপর প্রবল হয়ে যেত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র।
92. তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী। তারা শরীক করে, তিনি তা থেকে উর্ধ্বে।
93. বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! যে বিষয়ে তাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা যদি আমাকে দেখান,
94. হে আমার পালনকর্তা! তবে আপনি আমাকে গোনাহগার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত করবেন না।
95. আমি তাদেরকে যে বিষয়ের ওয়াদা দিয়েছি, তা আপনাকে দেখাতে অবশ্যই সক্ষম।
96. মন্দের জওয়াবে তাই বলুন, যা উত্তম। তারা যা বলে, আমি সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত।
97. বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি,
98. এবং হে আমার পালনকর্তা! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি।
99. যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলেঃ হে আমার পালণকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে ) প্রেরণ করুন।
100. যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়, এ তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে পর্দা আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।
101. অতঃপর যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন তাদের পারস্পরিক আত্নীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না।
102. যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম,
103. এবং যাদের পাল্লা হাল্কা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছে, তারা দোযখেই চিরকাল বসবাস করবে।
104. আগুন তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারন করবে।
105. তোমাদের সামনে কি আমার আয়াত সমূহ পঠিত হত না? তোমরা তো সেগুলোকে মিথ্যা বলতে।
106. তারা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দূর্ভাগ্যের হাতে পরাভূত ছিলাম এবং আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত জাতি।
107. হে আমাদের পালনকর্তা! এ থেকে আমাদেরকে উদ্ধার কর; আমরা যদি পুনরায় তা করি, তবে আমরা গোনাহগার হব।
108. আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না।
109. আমার বান্দাদের একদলে বলতঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।
110. অতঃপর তোমরা তাদেরকে ঠাট্টার পাত্ররূপে গ্রহণ করতে। এমনকি, তা তোমাদেরকে আমার স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছিল এবং তোমরা তাদেরকে দেখে পরিহাস করতে।
111. আজ আমি তাদেরকে তাদের সবরের কারণে এমন প্রতিদান দিয়েছি যে, তারাই সফলকাম।
112. আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা পৃথিবীতে কতদিন অবস্থান করলে বছরের গণনায়?
113. তারা বলবে, আমরা একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি। অতএব আপনি গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন।
114. আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা তাতে অল্পদিনই অবস্থান করেছ, যদি তোমরা জানতে?
115. তোমরা কি ধারণা কর যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে না?
116. অতএব শীর্ষ মহিমায় আল্লাহ, তিনি সত্যিকার মালিক, তিনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের মালিক।
117. যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার সনদ নেই, তার হিসাব তার পালণকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না।
118. বলূনঃ হে আমার পালনকর্তা, ক্ষমা করুন ও রহম করুন। রহমকারীদের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ট রহমকারী।