সূরা আল-মুমতাহানা এর বাংলা অনুবাদ

বেসিক সূরা তথ্য

সূরা নম্বর – 60
আয়াত সংখ্যা – 13
প্রকাশিত শহর – মদিনা
জুজ বিবরণ – জুজ 28 আয়াত 1-13
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 549 তম পৃষ্ঠা

সূরা আল-মুমতাহানার সারাংশ

সূরা আল-মুমতাহানা, কুরআনের 60 তম সূরা, অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক এবং জোটের বিষয়বস্তুকে সম্বোধন করে এবং একজনের বিশ্বাস এবং নীতি বজায় রেখে কীভাবে এই ধরনের সম্পর্কগুলিকে নেভিগেট করতে হয় তার নির্দেশিকা প্রদান করে৷ সূরাতে “আল-মুমতাহানা” (যে মহিলার পরীক্ষা করা হয়েছে) উল্লেখ থেকে এর নাম এসেছে। এটি 13টি শ্লোক নিয়ে গঠিত৷

সূরাটি একটি বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপট স্থাপন করে শুরু হয়েছে যেটিতে মুসলিমদের একটি দল জড়িত যারা একটি অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আশ্রয় চেয়েছিল। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি আনুগত্য এবং আনুগত্যের গুরুত্ব এবং যারা ইসলামের শত্রু তাদের সমর্থন করার নিষেধাজ্ঞাকে তুলে ধরে৷

সূরা আল-মুমতাহানা অমুসলিমদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য নির্দেশিকা প্রদান করে যারা প্রকাশ্যে ইসলামের প্রতি শত্রুতা করে না। এটি তাদের সাথে আচরণ করার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার, ন্যায্যতা এবং উদারতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়, নিজের বিশ্বাস এবং নীতিতে অবিচল থাকা।

সূরাটি যারা ইসলামের বিরোধিতা করে এবং মুসলমানদের প্রতি খারাপ উদ্দেশ্য পোষণ করে তাদের মধ্য থেকে মিত্র বা সমর্থক নেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। এটি জোর দেয় যে সত্যিকারের বিশ্বাসীদের এই ধরনের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছ থেকে সুরক্ষা বা জোট চাওয়া উচিত নয়৷

সূরা আল-মুমতাহানা অমুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের দ্বারা ইসলাম গ্রহণ এবং গ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করে। এটি বিশ্বাসীদেরকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে এবং যারা ইসলামের প্রতি প্রকৃত আগ্রহ দেখায় তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকতে উৎসাহিত করে৷

সূরাটি এমন ব্যক্তিদের আন্তরিকতা এবং উদ্দেশ্য পরীক্ষা করার গুরুত্বের উপর জোর দেয় যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে বলে দাবি করে। এটি ভণ্ডামি এবং ভান করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে, বিশ্বাসীদেরকে সত্য বিশ্বাসীদের এবং যারা শুধুমাত্র পার্থিব লাভের চেষ্টা করে তাদের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য সতর্ক থাকার আহ্বান জানায়৷

সূরা আল-মুমতাহানা একজনের বিশ্বাস রক্ষার জন্য এবং ইসলাম অনুশীলনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ খোঁজার জন্য অভিবাসন (হিজরাহ) ধারণাটি তুলে ধরে। এটি নিজের বিশ্বাস এবং নীতিতে দৃঢ় থাকার গুরুত্বের উপর জোর দেয়, এমনকি যদি এর অর্থ নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে যাওয়াও হয়।

আল্লাহর চূড়ান্ত কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার কথা বিশ্বাসীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে সূরাটি শেষ হয়েছে। এটি তাদের তাঁর ক্ষমা এবং নির্দেশনা চাইতে এবং সমস্ত বিষয়ে তাঁর উপর নির্ভর করতে উত্সাহিত করে৷

সংক্ষেপে, সূরা আল মুমতাহানা অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক এবং মিত্রতার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি আনুগত্য, ন্যায়বিচার এবং অন্যদের সাথে আচরণ করার ক্ষেত্রে ন্যায্যতার উপর জোর দেয়। সূরাটি ইসলামের শত্রুদের কাছ থেকে সমর্থন চাওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করে এবং বিশ্বাসে আন্তরিকতার গুরুত্বের উপর জোর দেয়। এটি বিশ্বাসীদেরকে অবিচল থাকতে, ধর্মান্তরিতদের আন্তরিকতা পরীক্ষা করতে এবং আল্লাহর নির্দেশনা ও ক্ষমার উপর নির্ভর করতে উৎসাহিত করে।

বাংলায় সূরা আল-মুমতাহানা এর অনুবাদ পড়ুন

Bismillahir Rahmanir Rahim

1. মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে। তারা রসূলকে ও তোমাদেরকে বহিস্কার করে এই অপরাধে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টিলাভের জন্যে এবং আমার পথে জেহাদ করার জন্যে বের হয়ে থাক, তবে কেন তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম প্রেরণ করছ? তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর, ত আমি খুব জানি। তোমাদের মধ্যে যে এটা করে, সে সরলপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।

2. তোমাদেরকে করতলগত করতে পারলে তারা তোমাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং মন্দ উদ্দেশ্যে তোমাদের প্রতি বাহু ও রসনা প্রসারিত করবে এবং চাইবে যে, কোনরূপে তোমরা ও কাফের হয়ে যাও।

3. তোমাদের স্বজন-পরিজন ও সন্তান-সন্ততি কিয়ামতের দিন কোন উপকারে আসবে না। তিনি তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।

4. তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে। কিন্তু ইব্রাহীমের উক্তি তাঁর পিতার উদ্দেশে এই আদর্শের ব্যতিক্রম। তিনি বলেছিলেনঃ আমি অবশ্যই তোমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করব। তোমার উপকারের জন্যে আল্লাহর কাছে আমার আর কিছু করার নেই। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমারই উপর ভরসা করেছি, তোমারই দিকে মুখ করেছি এবং তোমারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন।

5. হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদেরকে কাফেরদের জন্য পরীক্ষার পাত্র করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয় তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

6. তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা কর, তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ বেপরওয়া, প্রশংসার মালিক।

7. যারা তোমাদের শত্রু আল্লাহ তাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সম্ভবতঃ বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লাহ সবই করতে পারেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।

8. ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।

9. আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম।

10. মুমিনগণ, যখন তোমাদের কাছে ঈমানদার নারীরা হিজরত করে আগমন করে, তখন তাদেরকে পরীক্ষা কর। আল্লাহ তাদের ঈমান সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্যে হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্যে হালাল নয়। কাফেররা যা ব্যয় করেছে, তা তাদের দিয়ে দাও। তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। তোমরা কাফের নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না। তোমরা যা ব্যয় করেছ, তা চেয়ে নাও এবং তারাও চেয়ে নিবে যা তারা ব্যয় করেছে। এটা আল্লাহর বিধান; তিনি তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।

11. তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যদি কেউ হাতছাড়া হয়ে কাফেরদের কাছে থেকে যায়, অতঃপর তোমরা সুযোগ পাও, তখন যাদের স্ত্রী হাতছাড়া হয়ে গেছে, তাদেরকে তাদের ব্যয়কৃত অর্থের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যার প্রতি তোমরা বিশ্বাস রাখ।

12. হে নবী, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের আনুগত্য গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু।

13. মুমিনগণ, আল্লাহ যে জাতির প্রতি রুষ্ট, তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা পরকাল সম্পর্কে নিরাশ হয়ে গেছে যেমন কবরস্থ কাফেররা নিরাশ হয়ে গেছে।

Scroll to Top