বেসিক সূরা তথ্য
সূরা নম্বর – 72
আয়াত সংখ্যা – 28
প্রকাশিত শহর – মক্কা
জুজ বিস্তারিত – জুজ 29 আয়াত 1-28
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 572 তম পৃষ্ঠা
সূরা আল-জিনের সারাংশ
সূরা আল-জিন, কুরআনের 72 তম সূরা, জিন (আল্লাহর দ্বারা সৃষ্ট অদৃশ্য প্রাণী) এবং নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে সম্বোধন করে। সূরাতে “আল-জিন” (জিন) এর উল্লেখ থেকে এর নামটি এসেছে। এটি 28টি শ্লোক নিয়ে গঠিত৷
সূরাটি হাইলাইট করে শুরু হয়েছে যে কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি প্রত্যাদেশ, এবং এটি মানুষ এবং জিন উভয়ের জন্যই। এটি বর্ণনা করে যে কীভাবে জিনদের একটি দল কুরআন তেলাওয়াত শুনতে হয়েছিল এবং এর বার্তা দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিল৷
জিনরা কুরআনের সত্যতা এবং প্রজ্ঞাকে স্বীকার করেছে, স্বীকার করেছে যে এটি পূর্বে তাদের সম্মুখীন হওয়া সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। তারা আল্লাহকে তাদের প্রভু হিসাবে বিশ্বাস করেছিল এবং ইসলামের নির্দেশনা অনুসরণ করার অঙ্গীকার করেছিল
সূরা আল-জিন কুরআনের সাথে তাদের মুখোমুখি হওয়ার পূর্বে জিনদের বিভ্রান্তিকর বিশ্বাস এবং অনুশীলনকে সম্বোধন করে। এটা প্রকাশ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করেছিল এবং মিথ্যার সাথে লিপ্ত ছিল। সূরাটি একেশ্বরবাদের গুরুত্ব এবং একমাত্র আল্লাহর উপাসনার উপর জোর দেয়।
সূরাটি জিনদের অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাদের সীমাবদ্ধতা এবং দুর্বলতা তুলে ধরে। এটা দাবি করে যে তারা আল্লাহকে পরাভূত করতে বা প্রতারণা করতে পারে না এবং তাদের কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে পারে।
সূরা আল-জিন আল্লাহর মনোনীত রসূল হিসেবে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কর্তৃত্ব ও জ্ঞানকে নিশ্চিত করে। এটি বর্ণনা করে যে কীভাবে জিনরা নবীর কাছ থেকে নির্দেশনা চেয়েছিল এবং কীভাবে তিনি তাদের কাছে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন।
সূরাটি জোর দিয়ে শেষ করে যে যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করে তারা আশীর্বাদ ও পুরস্কার পাবে, আর যারা সত্য থেকে সরে যায় তারা শাস্তি ও ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
সংক্ষেপে, সূরা আল-জিন জ্বীন এবং কুরআনের সাথে তাদের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়কে সম্বোধন করে। এটি একেশ্বরবাদের গুরুত্ব, নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর বার্তাবাহক হিসেবে স্বীকৃতি এবং জিনদের তাদের কাজের জন্য জবাবদিহিতাকে তুলে ধরে। সূরাটি কুরআনের সার্বজনীন প্রকৃতির অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে এবং জিন সহ সকল প্রাণীর জন্য আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা এবং তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করার প্রয়োজনীয়তা।
বাংলায় সূরা আল-জিন এর অনুবাদ পড়ুন
1. বলুনঃ আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি;
2. যা সৎপথ প্রদর্শন করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করব না।
3. এবং আরও বিশ্বাস করি যে, আমাদের পালনকর্তার মহান মর্যাদা সবার উর্ধ্বে। তিনি কোন পত্নী গ্রহণ করেননি এবং তাঁর কোন সন্তান নেই।
4. আমাদের মধ্যে নির্বোধেরা আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে বাড়াবাড়ির কথাবার্তা বলত।
5. অথচ আমরা মনে করতাম, মানুষ ও জিন কখনও আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে না।
6. অনেক মানুষ অনেক জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তারা জিনদের আত্নম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত।
7. তারা ধারণা করত, যেমন তোমরা মানবেরা ধারণা কর যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ তা’আলা কখনও কাউকে পুনরুত্থিত করবেন না।
8. আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করছি, অতঃপর দেখতে পেয়েছি যে, কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ।
9. আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শ্রবণার্থে বসতাম। এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে জলন্ত উল্কাপিন্ড ওঁৎ পেতে থাকতে দেখে।
10. আমরা জানি না পৃথিবীবাসীদের অমঙ্গল সাধন করা অভীষ্ট, না তাদের পালনকর্তা তাদের মঙ্গল সাধন করার ইচ্ছা রাখেন।
11. আমাদের কেউ কেউ সৎকর্মপরায়ণ এবং কেউ কেউ এরূপ নয়। আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথে বিভক্ত।
12. আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমরা পৃথিবীতে আল্লাহ তা’আলাকে পরাস্ত করতে পারব না এবং পলায়ন করেও তাকে অপারক করত পরব না।
13. আমরা যখন সুপথের নির্দেশ শুনলাম, তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব, যে তার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস করে, সে লোকসান ও জোর-জবরের আশংকা করে না।
14. আমাদের কিছুসংখ্যক আজ্ঞাবহ এবং কিছুসংখ্যক অন্যায়কারী। যারা আজ্ঞাবহ হয়, তারা সৎপথ বেছে নিয়েছে।
15. আর যারা অন্যায়কারী, তারা তো জাহান্নামের ইন্ধন।
16. আর এই প্রত্যাদেশ করা হয়েছে যে, তারা যদি সত্যপথে কায়েম থাকত, তবে আমি তাদেরকে প্রচুর পানি বর্ষণে সিক্ত করতাম।
17. যাতে এ ব্যাপারে তাদেরকে পরীক্ষা করি। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তিনি তাকে উদীয়মান আযাবে পরিচালিত করবেন।
18. এবং এই ওহীও করা হয়েছে যে, মসজিদসমূহ আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ করার জন্য। অতএব, তোমরা আল্লাহ তা’আলার সাথে কাউকে ডেকো না।
19. আর যখন আল্লাহ তা’আলার বান্দা তাঁকে ডাকার জন্যে দন্ডায়মান হল, তখন অনেক জিন তার কাছে ভিড় জমাল।
20. বলুনঃ আমি তো আমার পালনকর্তাকেই ডাকি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না।
21. বলুনঃ আমি তোমাদের ক্ষতি সাধন করার ও সুপথে আনয়ন করার মালিক নই।
22. বলুনঃ আল্লাহ তা’আলার কবল থেকে আমাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ব্যতীত আমি কোন আশ্রয়স্থল পাব না।
23. কিন্তু আল্লাহ তা’আলার বাণী পৌছানো ও তাঁর পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। তথায় তারা চিরকাল থাকবে।
24. এমনকি যখন তারা প্রতিশ্রুত শাস্তি দেখতে পাবে, তখন তারা জানতে পারবে, কার সাহায্যকারী দূর্বল এবং কার সংখ্যা কম।
25. বলুনঃ আমি জানি না তোমাদের প্রতিশ্রুত বিষয় আসন্ন না আমার পালনকর্তা এর জন্যে কোন মেয়াদ স্থির করে রেখেছেন।
26. তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী। পরন্ত তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না।
27. তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রে ও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন
28. যাতে আল্লাহ তা’আলা জেনে নেন যে, রসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার পয়গাম পৌছিয়েছেন কি না। রসূলগণের কাছে যা আছে, তা তাঁর জ্ঞান-গোচর। তিনি সবকিছুর সংখ্যার হিসাব রাখেন।