সূরা আল-জাসিয়াহ এর বাংলা অনুবাদ

বেসিক সূরা তথ্য

সূরা নম্বর – 45
আয়াত সংখ্যা – 37
প্রকাশিত শহর – মক্কা
জুজ বিবরণ – জুজ 25 আয়াত 1-37
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 499 তম পৃষ্ঠা

সূরা আল-জাসিয়াহ সারাংশ

সূরা আল-জাসিয়াহ, যেটি “দ্য ন্যালিং” বা “দ্য ক্রাচিং” নামেও পরিচিত, এটি কুরআনের 45তম সূরা। এটি 37টি আয়াত নিয়ে গঠিত এবং সৃষ্টিতে আল্লাহর নিদর্শন, একেশ্বরবাদের বার্তা (তাওহিদ), অবিশ্বাসের পরিণতি এবং বিচার দিবস সহ বিভিন্ন বিষয়বস্তু সম্বোধন করে৷

সূরাটি সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর নিদর্শন তুলে ধরার মাধ্যমে শুরু হয় এবং সেগুলোর প্রতি চিন্তা-ভাবনা করতে উৎসাহিত করে। এটি আল্লাহর অস্তিত্ব এবং ক্ষমতার প্রমাণ হিসাবে স্বর্গ ও পৃথিবীর জটিল নকশা এবং ভারসাম্যের উপর জোর দেয়৷

সূরা আল-জাসিয়াহ একেশ্বরবাদের বার্তার উপর জোর দেয় এবং মিথ্যা দেবতার পূজার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। এটি অবিশ্বাসীদের বিশ্বাসকে খণ্ডন করে এবং জোর দেয় যে সমস্ত উপাসনা একমাত্র আল্লাহর দিকে পরিচালিত হওয়া উচিত৷

সূরাটি অবিশ্বাসীদের প্রত্যাখ্যান এবং অবিলম্বে শাস্তির জন্য তাদের দাবিকে সম্বোধন করে। এটি জোর দেয় যে আল্লাহর শাস্তি তার নির্ধারিত সময়ে আসবে এবং কেউ তা ত্বরা বা বিলম্ব করতে পারবে না।

সূরা আল-জাসিয়াহ-এ কাফেররা বিচারের দিন যে পরিণাম ভোগ করবে তার বর্ণনা আছে। এটি তাদের অবিশ্বাস এবং তাদের অন্যায় স্বীকার করার জন্য যে অনুশোচনা এবং অনুশোচনা অনুভব করবে তা তুলে ধরে। এটি জোর দেয় যে সেদিন তাদের সম্পদ, ক্ষমতা এবং মর্যাদা কোন কাজে আসবে না।

সূরাটি বিশ্বাসীদের আশ্বস্ত করে যে তাদের বিশ্বাস এবং সৎকর্মের প্রতিদান দেওয়া হবে। এটি জোর দেয় যে যারা আল্লাহর নির্দেশনা অনুসরণ করে এবং ভাল কাজ করার চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টার পুরষ্কার হিসাবে জান্নাত দেওয়া হবে।

সূরা আল-জাসিয়াহ কাফেরদের দ্বারা করা মিথ্যা দাবি এবং বানোয়াট বিরুদ্ধে সতর্ক করে। এটি বিশ্বাসীদের সত্যকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে এবং ইসলামের বিরোধীদের দ্বারা ছড়ানো মিথ্যার দ্বারা প্রভাবিত না হতে উৎসাহিত করে৷

জ্ঞান অন্বেষণ এবং বোঝার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে সূরাটি শেষ হয়েছে। এটি বিশ্বাসীদেরকে কুরআনের উপর চিন্তা-ভাবনা করতে এবং আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করার জন্য সচেষ্ট হতে উৎসাহিত করে।

সংক্ষেপে, সূরা আল-জাসিয়াহ সৃষ্টিতে আল্লাহর নিদর্শন, একেশ্বরবাদের বার্তা, অবিশ্বাসের পরিণতি এবং বিচার দিবসের উপর আলোকপাত করে। এটি প্রতিফলন, জ্ঞান অন্বেষণ এবং সত্যকে মেনে চলার গুরুত্বের অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে। সূরাটি শিরক এবং মিথ্যা দাবির বিরুদ্ধে সতর্ক করে, যখন বিশ্বাসীদের তাদের বিশ্বাস এবং সৎ কাজের জন্য তাদের পুরস্কারের আশ্বাস দেয়।

বাংলায় সূরা আল-জাসিয়াহ এর অনুবাদিত সংস্করণ পড়ুন

Bismillahir Rahmanir Rahim

1. হা-মীম।

2. পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এ কিতাব।

3. নিশ্চয় নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে মুমিনদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

4. আর তোমাদের সৃষ্টিতে এবং চারদিকে ছড়িয়ে রাখা জীব জন্তুর সৃজনের মধ্যেও নিদর্শনাবলী রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য।

5. দিবারাত্রির পরিবর্তনে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে রিযিক (বৃষ্টি) বর্ষণ করেন অতঃপর পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন, তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

6. এগুলো আল্লাহর আয়াত, যা আমি আপনার কাছে আবৃত্তি করি যথাযথরূপে। অতএব, আল্লাহ ও তাঁর আয়াতের পর তারা কোন কথায় বিশ্বাস স্থাপন করবে।

7. প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপাচারীর দুর্ভোগ।

8. সে আল্লাহর আয়াতসমূহ শুনে, অতঃপর অহংকারী হয়ে জেদ ধরে, যেন সে আয়াত শুনেনি। অতএব, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।

9. যখন সে আমার কোন আয়াত অবগত হয়, তখন তাকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করে। এদের জন্যই রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।

10. তাদের সামনে রয়েছে জাহান্নাম। তারা যা উপার্জন করেছে, তা তাদের কোন কাজে আসবে না, তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে তারাও নয়। তাদের জন্যে রয়েছে মহাশাস্তি।

11. এটা সৎপথ প্রদর্শন, আর যারা তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

12. তিনি আল্লাহ যিনি সমুদ্রকে তোমাদের উপকারার্থে আয়ত্বাধীন করে দিয়েছেন, যাতে তাঁর আদেশক্রমে তাতে জাহাজ চলাচল করে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ কর ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।

13. এবং আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন তোমাদের, যা আছে নভোমন্ডলে ও যা আছে ভূমন্ডলে; তাঁর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

14. মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে, যারা আল্লাহর সে দিনগুলো সম্পর্কে বিশ্বাস রাখে না যাতে তিনি কোন সম্প্রদায়কে কৃতকর্মের প্রতিফল দেন।

15. যে সৎকাজ করছে, সে নিজের কল্যাণার্থেই তা করছে, আর যে অসৎকাজ করছে, তা তার উপরই বর্তাবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।

16. আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাব, রাজত্ব ও নবুওয়ত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে পরিচ্ছন্ন রিযিক দিয়েছিলাম এবং বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম।

17. আরও দিয়েছিলাম তাদেরকে ধর্মের সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। অতঃপর তারা জ্ঞান লাভ করার পর শুধু পারস্পরিক জেদের বশবর্তী হয়ে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তারা যে বিষয়ে মতভেদ করত, আপনার পালনকর্তা কেয়ামতের দিন তার ফয়সালা করে দেবেন।

18. এরপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরীয়তের উপর। অতএব, আপনি এর অনুসরণ করুন এবং অজ্ঞানদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না।

19. আল্লাহর সামনে তারা আপনার কোন উপকারে আসবে না। যালেমরা একে অপরের বন্ধু। আর আল্লাহ পরহেযগারদের বন্ধু।

20. এটা মানুষের জন্যে জ্ঞানের কথা এবং বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়েত ও রহমত।

21. যারা দুস্কর্ম উপার্জন করেছে তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সে লোকদের মত করে দেব, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং তাদের জীবন ও মুত্যু কি সমান হবে? তাদের দাবী কত মন্দ।

22. আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জনের ফল পায়। তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।

23. আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না?

24. তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই তো শেষ; আমরা মরি ও বাঁচি মহাকালই আমাদেরকে ধ্বংস করে। তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমান করে কথা বলে।

25. তাদের কাছে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন একথা বলা ছাড়া তাদের কোন মুক্তিই থাকে না যে, তোমরা সত্যবাদী হলে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে নিয়ে আস।

26. আপনি বলুন, আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন, অতঃপর মৃত্যু দেন, অতঃপর তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্রিত করবেন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না।

27. নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন মিথ্যাপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

28. আপনি প্রত্যেক উম্মতকে দেখবেন নতজানু অবস্থায়। প্রত্যেক উম্মতকে তাদের আমলনামা দেখতে বলা হবে। তোমরা যা করতে, অদ্য তোমারদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে।

29. আমার কাছে রক্ষিত এই আমলনামা তোমাদের সম্পর্কে সত্য কথা বলবে। তোমরা যা করতে আমি তা লিপিবদ্ধ করতাম।

30. যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তাদের পালনকর্তা স্বীয় রহমতে দাখিল করবেন। এটাই প্রকাশ্য সাফল্য।

31. আর যারা কুফর করেছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের কাছে কি আয়াতসমূহ পঠিত হত না? কিন্তু তোমরা অহংকার করছিলে এবং তোমরা ছিলে এক অপরাধী সম্প্রদায়।

32. যখন বলা হত, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামতে কোন সন্দেহ নেই, তখন তোমরা বলতে আমরা জানি না কেয়ামত কি ? আমরা কেবল ধারণাই করি এবং এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই।

33. তাদের মন্দ কর্ম গুলো তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং যে আযাব নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত, তা তাদেরকে গ্রাস করবে।

34. বলা হবে, আজ আমি তোমাদেরকে ভুলে যাব, যেমন তোমরা এ দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিলে। তোমাদের আবাসস্থল জাহান্নাম এবং তোমাদের সাহায্যকারী নেই।

35. এটা এজন্যে যে, তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করেছিলে এবং পার্থিব জীবন তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল। সুতরাং আজ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে না এবং তাদের কাছে তওবা চাওয়া হবে না।

36. অতএব, বিশ্বজগতের পালনকর্তা, ভূ-মন্ডলের পালনকর্তা ও নভোমন্ডলের পালনকর্তা আল্লাহর-ই প্রশংসা।

37. নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে তাঁরই গৌরব। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

Scroll to Top