বেসিক সূরা তথ্য
সূরা নম্বর – 54
আয়াত সংখ্যা – 55
প্রকাশিত শহর – মক্কা
জুজ বিবরণ – জুজ 27 আয়াত 1-55
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 528 তম পৃষ্ঠা
সূরা আল-কামারের সারাংশ
সূরা আল-কামার, কুরআনের 54 তম সূরা, কুরআনের সত্যতা এবং পূর্ববর্তী রসূলদের যারা প্রত্যাখ্যান করেছিল তাদের পরিণতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সূরায় চাঁদের উল্লেখ থেকে এর নাম নেওয়া হয়েছে। এটি 55টি শ্লোক নিয়ে গঠিত৷
সূরাটি শুরু হয়েছে সামুদ সম্প্রদায়ের কাহিনী বর্ণনা করে যারা তাদের বার্তাবাহক নবী সালেহের বার্তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। এটি তাদের অবাধ্যতার ফলে যে শাস্তি পেয়েছিল তা বর্ণনা করে, যার মধ্যে একটি গুরুতর ভূমিকম্প অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সূরা আল-কামার এরপর আদ জাতির লোকদের কাহিনী বর্ণনা করে, যারা হযরত হুদ (আঃ) এর বাণীকে অস্বীকার করার ফলস্বরূপ এক বিধ্বংসী ঝড়ের দ্বারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বার্তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তারা যে পরিণতির সম্মুখীন হতে পারে সে সম্পর্কে অবিশ্বাসীদের সতর্কতা হিসাবে সূরাটি এই ঐতিহাসিক বিবরণগুলিকে তুলে ধরে।
সূরা আল কামার কুরআনে উপস্থিত অসংখ্য নিদর্শন এবং অলৌকিকতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে যা এর সত্যতা এবং ঐশ্বরিক উত্স নির্দেশ করে। এটি লোকেদের এই লক্ষণগুলির উপর চিন্তা করার জন্য এবং ধর্মগ্রন্থের মধ্যে থাকা জ্ঞান ও জ্ঞান নিয়ে চিন্তা করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়৷
সূরাটি আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব এবং তাঁর বিচারের নিশ্চয়তাকে নির্দেশ করে। এটি একটি অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে যে আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য শাস্তি আনতে এবং বিশ্বাসীদের পুরস্কৃত করার ক্ষমতা রাখেন৷
সূরা আল কামার অতীতের গল্প এবং তারা যে শিক্ষা দেয় তা থেকে মনোযোগ নেওয়ার গুরুত্বের উপর জোর দেয়। এটি অবিশ্বাসীদেরকে যারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের ভাগ্য নিয়ে চিন্তা করতে এবং তাদের অবিশ্বাসে অবিচল থাকলে তাদের পরিণতিগুলি বিবেচনা করতে উত্সাহিত করে৷
আল্লাহর আশীর্বাদ ও করুণার কথা বিশ্বাসীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে সূরাটি শেষ হয়েছে। এটি তাদের আশ্বস্ত করে যে তাদের প্রচেষ্টা এবং ভাল কাজগুলিকে পুরস্কৃত করা হবে এবং তাদের বিশ্বাসে অবিচল থাকা উচিত।
সংক্ষেপে, সূরা আল কামার অতীতে যারা রসূলদের প্রত্যাখ্যান করেছিল তাদের পরিণতিগুলি তুলে ধরে, কুরআনের সত্যতার উপর জোর দেয় এবং আল্লাহর নিদর্শনগুলির প্রতি চিন্তা করার আমন্ত্রণ জানায়। সূরাটি আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব, ইতিহাসের পাঠে মনোযোগ দেওয়ার গুরুত্ব এবং বিশ্বাসে অবিচল থাকার প্রয়োজনীয়তার অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে।
বাংলায় সূরা আল-কামার এর অনুবাদ পড়ুন
1. কেয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে।
2. তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো চিরাগত জাদু।
3. তারা মিথ্যারোপ করছে এবং নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করছে। প্রত্যেক কাজ যথাসময়ে স্থিরীকৃত হয়।
4. তাদের কাছে এমন সংবাদ এসে গেছে, যাতে সাবধানবাণী রয়েছে।
5. এটা পরিপূর্ণ জ্ঞান, তবে সতর্ককারীগণ তাদের কোন উপকারে আসে না।
6. অতএব, আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। যেদিন আহবানকারী আহবান করবে এক অপ্রিয় পরিণামের দিকে,
7. তারা তখন অবনমিত নেত্রে কবর থেকে বের হবে বিক্ষিপ্ত পংগপাল সদৃশ।
8. তারা আহবানকারীর দিকে দৌড়াতে থাকবে। কাফেরা বলবেঃ এটা কঠিন দিন।
9. তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়ও মিথ্যারোপ করেছিল। তারা মিথ্যারোপ করেছিল আমার বান্দা নূহের প্রতি এবং বলেছিলঃ এ তো উম্মাদ। তাঁরা তাকে হুমকি প্রদর্শন করেছিল।
10. অতঃপর সে তার পালনকর্তাকে ডেকে বললঃ আমি অক্ষম, অতএব, তুমি প্রতিবিধান কর।
11. তখন আমি খুলে দিলাম আকাশের দ্বার প্রবল বারিবর্ষণের মাধ্যমে।
12. এবং ভুমি থেকে প্রবাহিত করলাম প্রস্রবণ। অতঃপর সব পানি মিলিত হল এক পরিকম্পিত কাজে।
13. আমি নূহকে আরোহণ করালাম এক কাষ্ঠ ও পেরেক নির্মিত জলযানে।
14. যা চলত আমার দৃষ্টি সামনে। এটা তার পক্ষ থেকে প্রতিশোধ ছিল, যাকে প্রত্যখ্যান করা হয়েছিল।
15. আমি একে এক নিদর্শনরূপে রেখে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?
16. কেমন কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী।
17. আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?
18. আদ সম্প্রদায় মিথ্যারোপ করেছিল, অতঃপর কেমন কঠোর হয়েছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী।
19. আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম ঝঞ্জাবায়ু এক চিরাচরিত অশুভ দিনে।
20. তা মানুষকে উৎখাত করছিল, যেন তারা উৎপাটিত খর্জুর বৃক্ষের কান্ড।
21. অতঃপর কেমন কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী।
22. আমি কোরআনকে বোঝার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?
23. সামুদ সম্প্রদায় সতর্ককারীদের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল।
24. তারা বলেছিলঃ আমরা কি আমাদেরই একজনের অনুসরণ করব? তবে তো আমরা বিপথগামী ও বিকার গ্রস্থরূপে গণ্য হব।
25. আমাদের মধ্যে কি তারই প্রতি উপদেশ নাযিল করা হয়েছে? বরং সে একজন মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক।
26. এখন আগামীকল্যই তারা জানতে পারবে কে মিথ্যাবাদী, দাম্ভিক।
27. আমি তাদের পরীক্ষার জন্য এক উষ্ট্রী প্রেরণ করব, অতএব, তাদের প্রতি লক্ষ্য রাখ এবং সবর কর।
28. এবং তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তাদের মধ্যে পানির পালা নির্ধারিত হয়েছে এবং পালাক্রমে উপস্থিত হতে হবে।
29. অতঃপর তারা তাদের সঙ্গীকে ডাকল। সে তাকে ধরল এবং বধ করল।
30. অতঃপর কেমন কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী।
31. আমি তাদের প্রতি একটিমাত্র নিনাদ প্রেরণ করেছিলাম। এতেই তারা হয়ে গেল শুষ্ক শাখাপল্লব নির্মিত দলিত খোয়াড়ের ন্যায়।
32. আমি কোরআনকে বোঝার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?
33. লূত-সম্প্রদায় সতর্ককারীদের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল।
34. আমি তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম প্রস্তর বর্ষণকারী প্রচন্ড ঘূর্ণিবায়ু; কিন্তু লূত পরিবারের উপর নয়। আমি তাদেরকে রাতের শেষপ্রহরে উদ্ধার করেছিলাম।
35. আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ। যারা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে, আমি তাদেরকে এভাবে পুরস্কৃত করে থকি।
36. লূত (আঃ) তাদেরকে আমার প্রচন্ড পাকড়াও সম্পর্কে সতর্ক করেছিল। অতঃপর তারা সতর্কবাণী সম্পর্কে বাকবিতন্ডা করেছিল।
37. তারা লূতের (আঃ) কাছে তার মেহমানদেরকে দাবী করেছিল। তখন আমি তাদের চক্ষু লোপ করে দিলাম। অতএব, আস্বাদন কর আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী।
38. তাদেরকে প্রত্যুষে নির্ধারিত শাস্তি আঘাত হেনেছিল।
39. অতএব, আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী আস্বাদন কর।
40. আমি কোরআনকে বোঝবার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?
41. ফেরাউন সম্প্রদায়ের কাছেও সতর্ককারীগণ আগমন করেছিল।
42. তারা আমার সকল নিদর্শনের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। অতঃপর আমি পরাভূতকারী, পরাক্রমশালীর ন্যায় তাদেরকে পাকড়াও করলাম।
43. তোমাদের মধ্যকার কাফেররা কি তাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ ? না তোমাদের মুক্তির সনদপত্র রয়েছে কিতাবসমূহে?
44. না তারা বলে যে, আমারা এক অপরাজেয় দল?
45. এ দল তো সত্ত্বরই পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে।
46. বরং কেয়ামত তাদের প্রতিশ্রুত সময় এবং কেয়ামত ঘোরতর বিপদ ও তিক্ততর।
47. নিশ্চয় অপরাধীরা পথভ্রষ্ট ও বিকারগ্রস্ত।
48. যেদিন তাদেরকে মুখ হিঁচড়ে টেনে নেয়া হবে জাহান্নামে, বলা হবেঃ অগ্নির খাদ্য আস্বাদন কর।
49. আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি।
50. আমার কাজ তো এক মুহূর্তে চোখের পলকের মত।
51. আমি তোমাদের সমমনা লোকদেরকে ধ্বংস করেছি, অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?
52. তারা যা কিছু করেছে, সবই আমলনামায় লিপিবদ্ধ আছে।
53. ছোট ও বড় সবই লিপিবদ্ধ।
54. খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নির্ঝরিণীতে।
55. যোগ্য আসনে, সর্বাধিপতি সম্রাটের সান্নিধ্যে।