সূরা আল-ওয়াকিয়া এর বাংলা অনুবাদ

বেসিক সূরা তথ্য

সূরা নম্বর – 56
আয়াত সংখ্যা – 96
প্রকাশিত শহর – মক্কা
জুজ বিবরণ – জুজ 27 আয়াত 1-96
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 534 তম পৃষ্ঠা

সূরা আল-ওয়াকিয়ার সারাংশ

সূরা আল-ওয়াকিয়া, কুরআনের 56 তম সূরা, বিচার দিবসের বাস্তবতা, ধার্মিক ও দুষ্টের মধ্যে পার্থক্য এবং প্রতিটি গোষ্ঠীর পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করে। এটির নামকরণ করা হয়েছে আরবি শব্দ “ওয়াকিয়াহ” থেকে যার অর্থ “অনিবার্য ঘটনা” বা “মহান ঘটনা”। সূরাটি ৯৬টি আয়াত নিয়ে গঠিত।

সূরাটি বিচার দিবসের নিশ্চিততা এবং অনিবার্যতা তুলে ধরে শুরু হয়েছে। এটি বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের বর্ণনা করে যারা সেই দিন উপস্থিত থাকবে এবং তাদের নিজ নিজ গন্তব্য: অগ্রগণ্য, যারা আল্লাহর নিকটতম, ডান হাতের লোকেরা, যারা আশীর্বাদ ও পুরস্কৃত হবে এবং যারা পুরস্কৃত হবে। বাম হাত, যারা শাস্তি ও অপমানের সম্মুখীন হবে।

সূরা আল ওয়াকিয়া সব কিছুর স্রষ্টা এবং ধারক হিসাবে আল্লাহর শক্তি ও মহিমাকে জোর দেয়। এটি আকাশ ও পৃথিবীতে তাঁর সৃষ্টির নিদর্শন, রাত ও দিনের পরিবর্তন এবং তিনি তাঁর সৃষ্টিকে যে বিধান দিয়েছেন তা তুলে ধরে।

সূরাটি ধার্মিকদের আশীর্বাদ ও পুরস্কার এবং দুষ্টদের শাস্তি ও অনুশোচনার মধ্যে একটি বৈসাদৃশ্য উপস্থাপন করে। এটি জান্নাতের বাগানগুলিকে বর্ণনা করে, যার প্রচুর ফল এবং ছায়া রয়েছে, যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে এবং তাঁর জবাবদিহিকে ভয় করে তাদের জন্য চূড়ান্ত পুরস্কার হিসাবে।

সূরা আল ওয়াকিয়া পার্থিব আসক্তি এবং বিক্ষিপ্ততার বিরুদ্ধে সতর্ক করে যা একজনকে আল্লাহর স্মরণ এবং ধার্মিকতার অন্বেষণ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। এটি পার্থিব সম্পদের ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতিকে তুলে ধরে এবং আখেরাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দেয়।

সূরাটি মানবজাতিকে কুরআন এবং এর ঐশ্বরিক উত্স সম্পর্কে চিন্তা করার আহ্বান জানায়। এটি জোর দিয়ে বলে যে এটি কোন কবি বা কোন গীতিকারের কথা নয় বরং সমস্ত জগতের পালনকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি উদ্ঘাটন।

সূরা আল-ওয়াকিয়াহ পুনরুত্থান এবং পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আল্লাহর শক্তি এবং ক্ষমতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে শেষ হয়েছে, যেমন তিনি প্রথম স্থানে সৃষ্টির সূচনা করেছিলেন। এটি মানবতাকে আল্লাহর উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার এবং বিচারের দিনের প্রস্তুতির জন্য নিজের ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়৷

সংক্ষেপে, সূরা আল-ওয়াকিয়া বিচার দিনের বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা করে, ধার্মিক এবং দুষ্টের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে এবং প্রতিটি দল যে পরিণতির মুখোমুখি হবে তার উপর জোর দেয়। সূরাটি আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শনগুলির প্রতি চিন্তা করার আহ্বান জানায়, পার্থিব বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে সতর্ক করে এবং বিশ্বাসীদেরকে আখেরাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

বাংলায় সূরা আল-ওয়াকিয়াহ এর অনুবাদ পড়ুন

Bismillahir Rahmanir Rahim

1. যখন কিয়ামতের ঘটনা ঘটবে,

2. যার বাস্তবতায় কোন সংশয় নেই।

3. এটা নীচু করে দেবে, সমুন্নত করে দেবে।

4. যখন প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী।

5. এবং পর্বতমালা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।

6. অতঃপর তা হয়ে যাবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণা।

7. এবং তোমরা তিনভাবে বিভক্ত হয়ে পড়বে।

8. যারা ডান দিকে, কত ভাগ্যবান তারা।

9. এবং যারা বামদিকে, কত হতভাগা তারা।

10. অগ্রবর্তীগণ তো অগ্রবর্তীই।

11. তারাই নৈকট্যশীল,

12. অবদানের উদ্যানসমূহে,

13. তারা একদল পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।

14. এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্যে থেকে।

15. স্বর্ণ খচিত সিংহাসন।

16. তারা তাতে হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে।

17. তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা।

18. পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে,

19. যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্ত ও হবে না।

20. আর তাদের পছন্দমত ফল-মুল নিয়ে,

21. এবং রুচিমত পাখীর মাংস নিয়ে।

22. তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ,

23. আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়,

24. তারা যা কিছু করত, তার পুরস্কারস্বরূপ।

25. তারা তথায় অবান্তর ও কোন খারাপ কথা শুনবে না।

26. কিন্তু শুনবে সালাম আর সালাম।

27. যারা ডান দিকে থাকবে, তারা কত ভাগ্যবান।

28. তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বৃক্ষে।

29. এবং কাঁদি কাঁদি কলায়,

30. এবং দীর্ঘ ছায়ায়।

31. এবং প্রবাহিত পানিতে,

32. ও প্রচুর ফল-মূলে,

33. যা শেষ হবার নয় এবং নিষিদ্ধ ও নয়,

34. আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়।

35. আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি।

36. অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী।

37. কামিনী, সমবয়স্কা।

38. ডান দিকের লোকদের জন্যে।

39. তাদের একদল হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে।

40. এবং একদল পরবর্তীদের মধ্য থেকে।

41. বামপার্শ্বস্থ লোক, কত না হতভাগা তারা।

42. তারা থাকবে প্রখর বাষ্পে এবং উত্তপ্ত পানিতে,

43. এবং ধুম্রকুঞ্জের ছায়ায়।

44. যা শীতল নয় এবং আরামদায়কও নয়।

45. তারা ইতিপূর্বে স্বাচ্ছন্দ্যশীল ছিল।

46. তারা সদাসর্বদা ঘোরতর পাপকর্মে ডুবে থাকত।

47. তারা বলতঃ আমরা যখন মরে অস্থি ও মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে যাব, তখনও কি পুনরুত্থিত হব?

48. এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণও!

49. বলুনঃ পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ,

50. সবাই একত্রিত হবে এক নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে।

51. অতঃপর হে পথভ্রষ্ট, মিথ্যারোপকারীগণ।

52. তোমরা অবশ্যই ভক্ষণ করবে যাক্কুম বৃক্ষ থেকে,

53. অতঃপর তা দ্বারা উদর পূর্ণ করবে,

54. অতঃপর তার উপর পান করবে উত্তপ্ত পানি।

55. পান করবে পিপাসিত উটের ন্যায়।

56. কেয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন।

57. আমি সৃষ্টি করেছি তোমাদেরকে। অতঃপর কেন তোমরা তা সত্য বলে বিশ্বাস কর না।

58. তোমরা কি ভেবে দেখেছ, তোমাদের বীর্যপাত সম্পর্কে।

59. তোমরা তাকে সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি?

60. আমি তোমাদের মৃত্যুকাল নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই।

61. এ ব্যাপারে যে, তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের মত লোককে নিয়ে আসি এবং তোমাদেরকে এমন করে দেই, যা তোমরা জান না।

62. তোমরা অবগত হয়েছ প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে, তবে তোমরা অনুধাবন কর না কেন?

63. তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি?

64. তোমরা তাকে উৎপন্ন কর, না আমি উৎপন্নকারী ?

65. আমি ইচ্ছা করলে তাকে খড়কুটা করে দিতে পারি, অতঃপর হয়ে যাবে তোমরা বিস্ময়াবিষ্ট।

66. বলবেঃ আমরা তো ঋণের চাপে পড়ে গেলাম;

67. বরং আমরা হূত সর্বস্ব হয়ে পড়লাম।

68. তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি?

69. তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি বর্ষন করি?

70. আমি ইচ্ছা করলে তাকে লোনা করে দিতে পারি, অতঃপর তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?

71. তোমরা যে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি?

72. তোমরা কি এর বৃক্ষ সৃষ্টি করেছ, না আমি সৃষ্টি করেছি ?

73. আমি সেই বৃক্ষকে করেছি স্মরণিকা এবং মরুবাসীদের জন্য সামগ্রী।

74. অতএব, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামে পবিত্রতা ঘোষণা করুন।

75. অতএব, আমি তারকারাজির অস্তাচলের শপথ করছি,

76. নিশ্চয় এটা এক মহা শপথ-যদি তোমরা জানতে।

77. নিশ্চয় এটা সম্মানিত কোরআন,

78. যা আছে এক গোপন কিতাবে,

79. যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না।

80. এটা বিশ্ব-পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।

81. তবুও কি তোমরা এই বাণীর প্রতি শৈথিল্য পদর্শন করবে?

82. এবং একে মিথ্যা বলাকেই তোমরা তোমাদের ভূমিকায় পরিণত করবে?

83. অতঃপর যখন কারও প্রাণ কন্ঠাগত হয়।

84. এবং তোমরা তাকিয়ে থাক,

85. তখন আমি তোমাদের অপেক্ষা তার অধিক নিকটে থাকি; কিন্তু তোমরা দেখ না।

86. যদি তোমাদের হিসাব-কিতাব না হওয়াই ঠিক হয়,

87. তবে তোমরা এই আত্মাকে ফিরাও না কেন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও ?

88. যদি সে নৈকট্যশীলদের একজন হয়;

89. তবে তার জন্যে আছে সুখ, উত্তম রিযিক এবং নেয়ামতে ভরা উদ্যান।

90. আর যদি সে ডান পার্শ্বস্থদের একজন হয়,

91. তবে তাকে বলা হবেঃ তোমার জন্যে ডানপার্শ্বসস্থদের পক্ষ থেকে সালাম।

92. আর যদি সে পথভ্রষ্ট মিথ্যারোপকারীদের একজন হয়,

93. তবে তার আপ্যায়ন হবে উত্তপ্ত পানি দ্বারা।

94. এবং সে নিক্ষিপ্ত হবে অগ্নিতে।

95. এটা ধ্রুব সত্য।

96. অতএব, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামে পবিত্রতা ঘোষণা করুন।

Scroll to Top