বেসিক সূরা তথ্য
সূরা নম্বর – 53
আয়াত সংখ্যা – 62
প্রকাশিত শহর – মক্কা
জুজ বিবরণ – জুজ 27 আয়াত 1-62
প্রারম্ভিক পৃষ্ঠা সংখ্যা – 526 তম পৃষ্ঠা
সূরা আন-নাজমের সারাংশ
সূরা আন-নাজম, কুরআনের 53 তম সূরা, ইসলামের বার্তার সত্যতা, মুহাম্মদ (সাঃ) এর নবুয়ত এবং একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের গুরুত্বের উপর জোর দেয়। এটি 62টি শ্লোক নিয়ে গঠিত৷
রাত্রি যাত্রা (ইসরা) এবং অ্যাসেনশন (মি’রাজ) এর সময় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে সূরাটি শুরু হয়। এটি সেই দৃশ্যের বর্ণনা করে যেখানে নবী সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে ঐশী প্রত্যাদেশ পেয়েছিলেন এবং বিভিন্ন চিহ্ন ও আশ্চর্যের সাক্ষী হয়েছিলেন।
সূরা আন-নাজম নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য ও অনুসরণের গুরুত্বের উপর জোর দেয়। এটি স্পষ্ট করে যে তিনি ইচ্ছা বা ব্যক্তিগত ইচ্ছা থেকে কথা বলেন না বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে উদ্ঘাটন এবং নির্দেশনা জানান।
সূরাটি কাফেরদের মিথ্যা দাবীকে খন্ডন করে যারা নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে কুরআন বানোয়াট করার অভিযোগ এনেছিল। এটি জোর দেয় যে কোরান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি প্রত্যাদেশ এবং কোন মানুষের কথা নয়।
সূরা আন-নাজম মূর্তি এবং মিথ্যা দেবতার পূজা করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। এটি আল্লাহর একত্বের উপর জোর দেয় এবং সমস্ত উপাসনা ও ভক্তি একমাত্র তাঁরই প্রতি নির্দেশ করে৷
সূরাটি আল্লাহর ন্যায়বিচার ও প্রজ্ঞার উপর জোর দেয়। এটি অবিশ্বাসীদের মনে করিয়ে দেয় যে বিচারের দিনে তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের জবাবদিহি করা হবে এবং আল্লাহর শাস্তি ন্যায়সঙ্গত এবং অনিবার্য।
সূরা আন-নাজম বিচার দিবসের দৃশ্য বর্ণনা করে, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্ম অনুযায়ী প্রতিদান দেওয়া হবে। এটি জোর দেয় যে আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন সুপারিশকারী সেদিন উপকৃত হবে না।
আল্লাহর কাছে উপাসনা ও আত্মসমর্পণে নিজেকে বিনীত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সূরাটি শেষ হয়েছে। এটা বিশ্বাসীদেরকে সিজদা করতে এবং আন্তরিক ভক্তিতে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে উৎসাহিত করে।
সংক্ষেপে, সূরা আন-নাজম ইসলামের বার্তার সত্যতার উপর জোর দেয়, মুহাম্মদ (সাঃ) এর নবুওয়াতকে নিশ্চিত করে, মিথ্যা অভিযোগ অস্বীকার করে এবং আল্লাহর একত্বের উপর জোর দেয়। সূরাটি মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে সতর্ক করে, আল্লাহর ন্যায়বিচারকে তুলে ধরে এবং বিচার দিবসে জবাবদিহিতার ওপর জোর দেয়। এটি নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) কে অনুসরণ করার এবং সমস্ত উপাসনা একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দেশ করার গুরুত্বের অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে৷
বাংলায় সূরা আন-নাজম এর অনুবাদ পড়ুন
1. নক্ষত্রের কসম, যখন অস্তমিত হয়।
2. তোমাদের সংগী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি।
3. এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।
4. কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।
5. তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা,
6. সহজাত শক্তিসম্পন্ন, সে নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল।
7. উর্ধ্ব দিগন্তে,
8. অতঃপর নিকটবর্তী হল ও ঝুলে গেল।
9. তখন দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরও কম।
10. তখন আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি যা প্রত্যাদেশ করবার, তা প্রত্যাদেশ করলেন।
11. রসূলের অন্তর মিথ্যা বলেনি যা সে দেখেছে।
12. তোমরা কি বিষয়ে বিতর্ক করবে যা সে দেখেছে?
13. নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিল,
14. সিদরাতুলমুন্তাহার নিকটে,
15. যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত।
16. যখন বৃক্ষটি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার, তদ্দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল।
17. তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয় নি এবং সীমালংঘনও করেনি।
18. নিশ্চয় সে তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে।
19. তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও ওযযা সম্পর্কে।
20. এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে?
21. পুত্র-সন্তান কি তোমাদের জন্যে এবং কন্যা-সন্তান আল্লাহর জন্য?
22. এমতাবস্থায় এটা তো হবে খুবই অসংগত বন্টন।
23. এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের রেখেছ। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে।
24. মানুষ যা চায়, তাই কি পায়?
25. অতএব, পরবর্তী ও পূর্ববর্তী সব মঙ্গলই আল্লাহর হাতে।
26. আকাশে অনেক ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হয় না যতক্ষণ আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন, অনুমতি না দেন।
27. যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তারাই ফেরেশতাকে নারীবাচক নাম দিয়ে থাকে।
28. অথচ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমানের উপর চলে। অথচ সত্যের ব্যাপারে অনুমান মোটেই ফলপ্রসূ নয়।
29. অতএব যে আমার স্মরণে বিমুখ এবং কেবল পার্থিব জীবনই কামনা করে তার তরফ থেকে আপনি মুখ ফিরিয়ে নিন।
30. তাদের জ্ঞানের পরিধি এ পর্যন্তই। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা ভাল জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন কে সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে।
31. নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর, যাতে তিনি মন্দকর্মীদেরকে তাদের কর্মের প্রতিফল দেন এবং সৎকর্মীদেরকে দেন ভাল ফল।
32. যারা বড় বড় গোনাহ ও অশ্লীলকার্য থেকে বেঁচে থাকে ছোটখাট অপরাধ করলেও নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত। তিনি তোমাদের সম্পর্কে ভাল জানেন, যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা থেকে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে কচি শিশু ছিলে। অতএব তোমরা আত্নপ্রশংসা করো না। তিনি ভাল জানেন কে সংযমী।
33. আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
34. এবং দেয় সামান্যই ও পাষাণ হয়ে যায়।
35. তার কাছে কি অদৃশ্যের জ্ঞান আছে যে, সে দেখে?
36. তাকে কি জানানো হয়নি যা আছে মূসার কিতাবে,
37. এবং ইব্রাহীমের কিতাবে, যে তার দায়িত্ব পালন করেছিল?
38. কিতাবে এই আছে যে, কোন ব্যক্তি কারও গোনাহ নিজে বহন করবে না।
39. এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে,
40. তার কর্ম শীঘ্রই দেখা হবে।
41. অতঃপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে।
42. তোমার পালনকর্তার কাছে সবকিছুর সমাপ্তি,
43. এবং তিনিই হাসান ও কাঁদান
44. এবং তিনিই মারেন ও বাঁচান,
45. এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী।
46. একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্খলিত করা হয়।
47. পুনরুত্থানের দায়িত্ব তাঁরই,
48. এবং তিনিই ধনবান করেন ও সম্পদ দান করেন।
49. তিনি শিরা নক্ষত্রের মালিক।
50. তিনিই প্রথম আদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন,
51. এবং সামুদকেও; অতঃপর কাউকে অব্যহতি দেননি।
52. এবং তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়কে, তারা ছিল আরও জালেম ও অবাধ্য।
53. তিনিই জনপদকে শুন্যে উত্তোলন করে নিক্ষেপ করেছেন।
54. অতঃপর তাকে আচ্ছন্ন করে নেয় যা আচ্ছন্ন করার।
55. অতঃপর তুমি তোমার পালনকর্তার কোন অনুগ্রহকে মিথ্যা বলবে?
56. অতীতের সতর্ককারীদের মধ্যে সে-ও একজন সতর্ককারী।
57. কেয়ামত নিকটে এসে গেছে।
58. আল্লাহ ব্যতীত কেউ একে প্রকাশ করতে সক্ষম নয়।
59. তোমরা কি এই বিষয়ে আশ্চর্যবোধ করছ?
60. এবং হাসছ-ক্রন্দন করছ না?
61. তোমরা ক্রীড়া-কৌতুক করছ,
62. অতএব আল্লাহকে সেজদা কর এবং তাঁর এবাদত কর।